২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হলে সকল জেলায় পৃথক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরায় নতুন সুবিশাল নয়নাভিরাম দশতলা ভবন নির্মিত হয়, যার উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি। কিন্তু সর্বস্তরের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা নিমিষেই দূর্ভোগে পরিণত হয় নব নির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন ও জেলা জজ আদালত ভবনের মধ্যে সরাসরি যাতায়াত রাস্তার অভাবে। দুই আলাদত ভবনের মাঝে জেলা প্রশাসনের ভবন আর তাদের নিজস্ব প্রাচীর, যে প্রাচীর চীনের প্রাচীর হয়ে দুই আদালত ভবনের মাঝে বিভেদ, বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে আদালত পাড়ার বিচারক, আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী, আদালতের কর্মচারী, পুলিশ সর্বোপরি সাধারণ বিচারপ্রার্থী জনগণের বিতৃষ্ণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জার্মান প্রাচীর ভেঙে দুই জার্মানী এক হলেও কোন এক অজানা রেজুলেশনের আজব ক্ষমতা বলে দুই আদালতের এই প্রাচীর ভাঙার কোনই লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছিল না। ইতোমধ্যে ব্যস্ততম মূল সড়ক দিয়ে এক আদালত হতে আরেক আদালতে গমনকালে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন একজন বিজ্ঞ আইনজীবী, অনেকেই হয়েছেন আহত। তবুও কোন উপায় না দেখে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দুই আদালতে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়েছেন সবাই।
সাতক্ষীরার বর্তমান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব শেখ মফিজুর রহমান মহোদয় সাতক্ষীরা জেলায় ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে যোগদান করার পরপরই সকল আইনজীবী ও কর্মচারীদের গণ দাবী ছিল এই প্রাচীর ভেঙে দুই আদালতের মাঝে পথ বের করে দেয়ার। তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যেভাবেই হোক এই দাবী পূরণে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। মাননীয় জেলা জজ মহোদয় এই সাতক্ষীরার মাটিতে পা রেখেই বলেছিলেন, “আমি সম্পর্কের সেতু গড়তে এসেছি”। তাঁর এই অঙ্গীকারের সূত্র ধরে জেলার বিচার বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সাথে চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে অফিসিয়ালি এই রাস্তার জন্য একযোগে কাজ করেন। ফলশ্রুতিতে আইন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত এই তিন বিভাগের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠিত হয়, কমিটির সদস্য সরেজমিনে সাতক্ষীরা এসে প্রাচীর ভেঙে পথচলার সম্ভব্যতা বিবেচনা করেন। পলে পলে অনেক সময় চলে যায় কিন্তু কি এক অজানা কারণে থেমে যায় এই প্রাচীর ভেঙে রাস্তার কাজ। কিন্তু মাননীয় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় মনে প্রাণে ইতিবাচক চেতনার অধিকারী। তিনি সরবে নীরবে তাঁর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে অবশেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে পাওয়া গেল দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত অনুমোদন। আর আজ সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল মহোদয় ও পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়কে সাথে নিয়ে পিডব্লিঊডি এর সহযোগীতায় মাননীয় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জনাব শেখ মফিজুর রহমান মহোদয় ভেঙে ফেললেন দুই আদালতের মাঝে বিভেদের প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো সীমানা প্রাচীর। প্রাচীর ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার পরে মাননীয় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “সম্পর্কের দেয়াল নয়, সম্পর্কের সেতু রচিত হলো”। অতঃপর তিনি ভাঙা প্রাচীর পার হয়ে পুলিশ সুপার মহোদয়কে সাথে নিয়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে পদার্পণ করেন।
আজ সাতক্ষীরা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী বাস্তবায়িত হলো।
লেখক : সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট