আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরায় কিছুতেই কমছেনা করোনা সংক্রমণ। এরই মধ্যে চিকিৎসক ও নার্স সংকটে আরো প্রকট হয়ে উঠেছে হাসপাতালগুলো। ভাইরাসটির পরীক্ষার জন্য বেশী বেশী র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।
অন্যদিকে, সাতক্ষীরায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করোনা চিকিৎসায় সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত প্রটোকল মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণের অপ্রতুলতার পাশাপশি এসব ব্যবহারে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের অনীহা দেখা যাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে পিপিইর ব্যবহার নেই বললেই চলে। সংক্রমণ বৃদ্ধিতে এসবরে ভূমিকাও কম নয় বলে মনে করছে সচেতন মহল। আক্রান্ত রোগীর বাড়ি লকডউন ও আইসোলেশনের উদ্যোগও খুবই কম।
গত এক সপ্তাহ যাবত সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমনের হার ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ উঠানামা করছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২১১ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে ১১১ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। যা সংক্রমনের হার ৫২.৬০ শতাংশ। এনিয়ে, জেলায় আজ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ২৫৬ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় দুই জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও ৫ জন উপসর্গে মারা গেছেন। করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ৫০ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরো অন্ততঃ ২৪৪ জন। জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রুগী রয়েছেন ৬৪৭ জন। এর মধ্যে ৫৭ জন দুটি সরকারি হাসপাতালে ও ৫৯০ জন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
করোনা সংক্রমনের বৃদ্ধির মধ্যেও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। সীমিত সংখ্যক জনবলে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার অপর্ণা রাণী পাল জানান, জেলায় অস্বাভাবিকহারে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সীমিত জনবলে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, তাদের ওখানে ১৬৫ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৫০ জন। বর্তমানে ডিউটি করছেন ৯৫ জন। এর মধ্যে ৯ জন আবার করোনা পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অচিরেই নার্স নিয়োগ না দিলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
নাগরিক আনোদলন মঞ্চ সাতক্ষীরার সাধারন সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম জানান, জেলায় যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে ভাইরাসটির পরীক্ষার জন্য জেলায় ব্যাপক হারে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, একই চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচরী একদিকে যেমন করোনা রুগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। অপরদিকে তারাই আবার সাধারণ রুগীদেরও চিকিৎসা দিচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে। এর ফলে একদিনে যেমন করোনা মোকাবেলায় এসব সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক ও নার্স-কর্মচারীরা নিজেরা ঝুঁকিতে পড়ছেন আবার অন্যান্য সাধারণ রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের সংক্রমণের ঝুঁকি আরোও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা জানান, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৩১ জন। এ মধ্যে অনেকেই আছেন অসুস্থ্য। অচিরেই চিকিৎসক নিয়োগ না দিলে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে তিনি আরো জানান। এদিকে, করোনা রুগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালটিতে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রুগীদের জন্য বেডের সংখ্যা ৮৭ থেকে বাড়াতে বাড়াতে ১৩৫ টি করলেও এতে সংকুলান হচ্ছেনা। ফলে আগামিকাল শনিবার আরো ১৫টি বেড বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের এই তত্ত্বাবধায়ক।