দেশের খবর : করোনার টিকা নিয়ে নানা সংকট দূর করে মোট ৪৫ লাখ ডোজ টিকা পেল বাংলাদেশ। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ১৩ লাখ এবং চীন থেকে কেনা ২০ লাখ ডোজ। শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে আসে মডার্নার আরো ১২ লাখ ডোজ টিকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, টিকা আর কোন চিন্তা নেই, ডিসেম্বরের মধ্যেই আসবে ১০ কোটি টিকা। পরে আরো সাত কোটি।
শুক্রবার রাতে সোয়া ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ১৩ লাখ ডোজ টিকা নিয়ে অবতরণ করে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এই টিকা পেল বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এ সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরে টিকার চালান গ্রহণ করার পর সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক জানান, দেশে আর কোনো টিকার সংকট হবে না। আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই বিভিন্ন ধাপে টিকা পাওয়া যাবে মোট ১৭ কোটি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ১৩ লাখ টিকা আসার ঘণ্টাখানেক পর শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে চীন থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে এসে পৌঁছায় সিনোফার্মের ১০ লাখ ডোজ টিকা। পরে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আসে আরো ১০ লাখ টিকা। চীন থেকে কেনা দেড় কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান এটি। এরপর সকাল সাড়ে আটটার দিকে আসে মডার্নার আরো ১২ লাখ ডোজ টিকা। এ সময়, সবাইকে টিকার আওতায় আনতে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা হবেনা বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, টিকার সঙ্কটে দেশে গণ টিকাদান কর্মসূচিতে ছন্দপতন হয়েছিল। এসব টিকা আসায় গণটিকাদান কর্মসূচি আবারো গতি পাবে। টিকাদান কার্যক্রম আমরা জোরেশোরেই শুরু করেছিলাম। টিকা না পাওয়ায় মাঝখানে কিছুদিনের জন্য টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন আমরা আনন্দের সাথে বলতে পারি, আগামীতে টিকার আর কোনো অভাব হবে না।
ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশ বিভিন্ন উৎস থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে বা তার পরে জনজন অ্যান্ড জনসন থেকে আরও সাত কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে।
টিকা আসার সাথে সাথে বিমানবন্দর থেকে ফ্রিজার ভ্যানে করে সরাসরি মহাখালীর ইপিআই স্টোরে নেয়া হয়। সেখানে মাইনাস ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হবে মডার্নার টিকা এবং তিন থেকে আট ড্রিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা হবে সিনোফার্মের টিকা।
দুই মাসের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার চীনা কোম্পানি সিনোফার্ম ও যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সারা দেশে এরইমধ্যে নতুন করে গণ টিকাদান শুরু হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম হলো কোভ্যাক্স, যা বিশ্বের সব মানুষের সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে।
গত ২২ জুন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের পাশাপাশি এশিয়ার ১৮টি দেশকে টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ টিকা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে হোয়াইট হাউস। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বরাদ্দ হওয়া টিকা থেকে বাংলাদেশের জন্য মডার্নার তৈরি ২৫ লাখ টিকা পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। কিন্তু টিকা সঙ্কট দেখা দিলে গত ২৫ এপ্রিল সে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। সেসময় টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছিল।
সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো টিকা না থাকায় অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় সরকার।
৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল দেশে গণটিকা দান কর্মসূচি। কিন্তু টিকা সংকটে মাঝ পথে তা থমকে যায়। ২১ জুন থেকে আবা্রও শুরু হয়েছে গণটিকাদান।