দেশের খবর : মামলা তদন্তের খাতিরে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনির সঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের ডিবি অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনের অনৈতিক মেলামেশার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে, প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের (ডিবি) সকল কার্যক্রম থেকে এডিসি গোলাম সাকলায়েনকে নিবৃত্ত করা হয়েছে। তার সরকারি মোবাইল ফোন নম্বরও জমা নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৭ আগস্ট) দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে ডিএমপির মিডয়া উইং থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। গোলাম সাকলায়েন শিথিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত।
এর আগে ডিবির দায়িত্বে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকে জানান, যেহেতু একটা অভিযোগ উঠেছে তাই তাকে আমরা সরিয়ে নিচ্ছি। বিষয়টি এখনো তদন্তনাধীন। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। এসময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন বোট ক্লাবের শ্লীলতাহানি চেষ্টার মামলার বাদী পরীমণির সঙ্গে ১৮ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন। এটা তদন্তে উঠে আসবে কি-না? উত্তরে শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা থ্রোলি তদন্ত করবো। এই বিষয়টি আমাদের তদন্তে থাকবে। আমরা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে যা পাবো এবং মিডিয়াতে যা এসেছে সব নিয়েই তদন্ত করবো। কেউ তদন্ত কর্মকর্তা হোক আর অন্য কেউ হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যেটি সত্যি সেটি উদঘাটন করা হবে।’
উল্লেখ্য, সাকলায়েন সাভারের বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমণীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে তার বাসায় একাধিকবার যাতায়াত করেছেন পরীমণি। এ সময় পরীর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। এই পুলিশ কর্মকর্তা ও পরীমনি বিভিন্ন সময় গাড়িতে একসঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরাও করেছেন।
সম্প্রতি সাকলায়েনের বাসায় যাতায়াতের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। এমন একটি ফুটেজ ঢাকা পোস্টের হাতেও এসেছে।
সিসিটিভি ফুটেজ দেখা যায়, ১ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পরীমণির সাদা রংয়ের হ্যারিয়ার গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫ ৯৬ ৫৩) নিয়ে গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের অফিসার্স কলোনির মধুমতি ভবনের ৯/সি নম্বর সরকারি ফ্ল্যাটে বাসায় আসেন। প্রথমে সেই গাড়ি থেকে লাল রংয়ের টি-শার্ট পরে বের হন সাকলায়েন। সাদা রংয়ের একটি স্লিপিং গাউন পরে নামেন নায়িকা পরীমনি। সেই রাতে সোয়া ২টায় ওই ভবন থেকে বের হন পরীমনি। তবে রাতে বের হওয়ার সময় পরীমনির পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক, আর সাকলায়েনের গায়ে সাদা টি-শার্ট।
সম্প্রতি ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদেও পরীমণি সাকলায়েনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনির সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুও এ সম্পর্কে বিষয়ে বিস্তারিত বলেন।
ডিবির একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, সাকলায়েন নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে মামলার তদন্তের সময় পরীমনির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিন্তু সাকলায়েন বিবাহিত, বিষয়টি জানার পর পরীমনি ও তার মধ্যে মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। পরে দীপুর উদ্যোগে পরীমনির সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভবিক হয়। গত কোরবানি ঈদের সময় পরীমণির বাসায় তিন দিন ছিলেন সাকলায়েন। তখন বাসায় তারা ছাড়া আর কেউ ছিল না।
এ বিষয়ে পরীমনির গাড়িচালক নাজির হোসেন বলেন, রাজারবাগ পুলিশ কোয়ার্টারে পরীমনিকে গত ১ আগস্ট সকালে তিনি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আবার রাতে পরীমনির ফোন পেয়ে তাকে আনতে যান। এছাড়াও তারা দু’জনই গাড়ি চালাতে পারে। তারা মাঝেমধ্যেই আমাকে রেখে নিজেরা ড্রাইভ করে হাতিরঝিলে ঘুরতে যেতো। গাড়ি চালানো অবস্থায় তারা কোনো কথা বলতেন না। তবে গাড়িতে মদ্যপান করতো। আবার মাঝেমধ্যে তারা একা গাড়ি নিয়ে বের হতেন।
গোলাম সাকলায়েন ৩০তম বিসিএসএর অফিসার। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। সাকলায়েনের স্ত্রী প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলায় তার স্ত্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে।