রাজনীতির খবর : নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নামে কানাডায় বাড়ি কেনার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের নিয়ে এক মামলার শুনানির সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে এই তথ্য জানতে চান।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা থেকে নাটোরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নাম বাদ পড়ায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে নাটোরের সানরাইজ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি মো. রেজাউল চৌধুরী হাইকোর্টে পক্ষভুক্ত হওয়ার আবেদন করেন।
আদালত আবেদন নিষ্পত্তি করে তার কাছে নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কেনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে তা নিজে হলফ করে হাইকোর্ট, দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে আদেশ দিয়েছেন।
‘স্ত্রীর নামে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন এমপি শিমুল’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার টরন্টো থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের নিরিবিলি শহর স্কারবোরো। শহরটির হেয়ারউড সড়কের ৭৩ নম্বর বাড়িটির মালিক একজন বাংলাদেশি নাগরিক। নাম শামীমা সুলতানা জান্নাতী। গত বছরের শুরুর দিকে প্রায় দুই মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার খরচ করে ডুপ্লেক্স ওই বাড়িটি কেনেন তিনি। বাংলাদেশি পাসপোর্ট অনুযায়ী তার পেশা ‘গৃহবধূ’ হলেও শামীমা কোনো সাধারণ নারী নন, নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্ত্রী তিনি।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- টরন্টোর ল্যান্ড রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল বলছে, ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি পাঁচ রুম, পাঁচ বাথ এবং তিনটি পার্কিংসহ ওই বাড়িটির মালিকানা বদল হয়। সঞ্চিত এবং সুধীর মদন নামের দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার কানাডিয়ান ডলারে বাড়িটি কেনেন শামীমা সুলতানা জান্নাতী। ওই দিনই দুই লাখ ৭০ হাজার ডলার ট্যাক্সও পরিশোধ করেন তিনি। সব মিলিয়ে বনেদি বাড়িটি কিনতে তার খরচ হয় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর সব সম্পদের বিবরণসহ ঘোষণা আছে দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায়। সেই হলফনামা বিশ্নেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য শিমুল উল্লেখ করেছেন, নগদ ১১ লাখ টাকাসহ তার এবং গৃহবধূ স্ত্রীর নামে সাকুল্যে ৫১ লাখ ৩৭ হাজার টাকার সম্পদ রয়েছে। আর ২০১৮ সালের বিবরণীতে দু’জনের সম্পদের মূল্য দেখানো হয় ছয় কোটি ৫৬ লাখ টাকা। মাত্র পাঁচ বছরে সম্পদ বৃদ্ধির এই হার প্রায় ১৩ গুণ!
সরকারি খাতায় ব্যক্তিগত আয়-ব্যয়ের হিসাবে শামীমার সম্পদের এমন ঊর্ধ্বগতির সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা যেমন নেই, তেমনি মোট সম্পদের প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে কেনা কানাডার বাড়িটিরও কোনো উল্লেখ কোথাও নেই বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।