দেশের খবর : কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর দ্বন্দ্বের জেরে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিকের তোলা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এমপি বাহার। মুসলিম মৌলবাদীদের পাশাপাশি হিন্দু মৌলবাদীরাও দেশে সংঘাত ছড়াচ্ছে অভিযোগ তুলে গোবিন্দ প্রামাণিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে সম্প্রীতির পক্ষে গণ জমায়েত’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এই দাবি জানান।
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, গোবিন্দ প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাকে গ্রেপ্তার করলেই কারা পূজামণ্ডপে হামলা করেছে, তা বেরিয়ে আসবে। তিনি সারা দেশের মানুষকে উসকে দিচ্ছেন।
কুমিল্লায় সব ধর্মের মানুষের একসঙ্গে বসবাস উল্লেখ করে এমপি বলেন, ‘এখানে সবার মধ্যে সম্প্রীতি আছে। যারা চক্রান্ত করেছেন, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এই ক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা আছে। আমরাও তাদের সঙ্গে কাজ করবো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক শনিবার অনলাইনভিত্তিক একটি টক শোতে দাবি করেন, কুমিল্লার স্থানীয় লোকজন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা তাকে বলেছেন, এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গোবিন্দ প্রামাণিকের ওই বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লায়ও চলছে আলোচনা। তবে বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এরই মধ্যে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর স্থানীয় হিন্দু নেতারা বলছেন, এ ধরনের কোনো বক্তব্য তারা গোবিন্দর কাছে দেননি।
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সোমবার বিকেলে কান্দিরপাড়ে আয়োজিত গণজমায়েতে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
তিনি বলেন, ‘এর আগেও কুমিল্লায় নানাভাবে সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চালিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। আমরা তাদের প্রতিহত করেছি। এবার আবার কুমিল্লায় ষড়যন্ত্রের বীজ বোনা হয়েছে, তবে এখানকার হিন্দু-মুসলমান ভাই ও প্রশাসনের দৃঢ়তায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
এমপি বাহার বলেন, ‘অর্থ-বিত্ত, টাকা-পয়সার লোভে সারা দেশে মুসলিম মৌলবাদীরা যেমন সংঘাত ছড়াচ্ছে, হিন্দু মৌলবাদীরাও সংঘাত ছড়াচ্ছে। তেমনই একজন গোবিন্দ প্রামাণিক। তিনি বিভিন্ন জায়গায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন এই দ্বন্দ্ব ওমুকে করেছে, তমুকে করেছে। অমুকের কারণে হইছে, তমুকের কারণে হইছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হোক, নিশ্চয়ই তার কাছে তথ্য আছে।’
গোবিন্দ প্রামাণিককে উদ্দেশ করে এমপি বাহার বলেন, ‘আপনি কোন ফাঁকে এলেন, কোন ফাঁকে গেলেন? আপনার যদি শক্তি থাকে তাহলে আবার কুমিল্লায় আসেন। আপনাকে হিন্দুরাই মোকাবিলা করবে।’
কুমিল্লার ঘটনার রেশ ধরে রংপুরে হিন্দু ভাইদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে হামলাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘একটু সাবধান থাকবেন মিয়া ভাইয়েরা। আপনাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আপনারা যেমন মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছেন, পেট্রল ঢেলে আপনাদের ঘরবাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, গোবিন্দ প্রামাণিক পূজামণ্ডপে হামলার পর কুমিল্লায় এসেছেন। কে কে এই কাজ করেছেন, তা তিনি বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে গিয়ে বলেছেন। তিনি সারা দেশের এজেন্ট। তাকে ধরলে সব বেরিয়ে আসবে। আমি ইউটিউবে দেখেছি, গোবিন্দ প্রামাণিক কুমিল্লা নিয়ে কথা বলেছেন। তাই আমি আজকের টাউন হলের গণজমায়েত অনুষ্ঠানে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি।
যোগাযোগ করা হলে গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, উনি এলাকার এসপি, ওই এলাকার জনগণকে রক্ষা করার দায়িত্ব তার। এলাকার লোকজন বলেছেন, এমপি এতটাই প্রভাবশালী যে বিএনপি-জামায়াত মানববন্ধন করতে পারে না। এই অবস্থায় উনার অবহেলা ছাড়া এ ঘটনা ঘটতে পারে না।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫টি মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।