রাজনীতির খবর : গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল বুধবার অথবা পরশু বৃহস্পতিবার আত্মপ্রকাশ করতে পারে। মধ্যপন্থার এই দলে আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন ড. রেজা কিবরিয়া। আর নুরুল হক নুর থাকছেন সদস্য সচিব। নতুন দলের নাম হতে পারে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ অথবা ‘বাংলাদেশ অধিকার পার্টি’।
এই দলে উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দলটির মূল স্লোগান হবে ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার’। দলের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি বড় সমাবেশের মাধ্যমে নতুন দল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। অনুমতি না পেলে জাতীয় প্রেসক্লাব বা রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠান করে দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। সর্বোচ্চ ২০০ সদস্যের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে দলটির। পরামর্শ দেবেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ। কোনো পদপদবি না থাকলেও তারা শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে পরামর্শ দেবেন। সূত্র জানায়, ছাত্র অধিকার পরিষদকে কেন্দ্রীভূত করে এরই মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবীকে নিয়ে পাঁচটি পরিষদ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- ছাত্র অধিকার পরিষদ, যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, প্রবাসী অধিকার পরিষদ ও পেশাজীবী অধিকার পরিষদ। শিগগির গঠন করা হবে নারী অধিকার পরিষদ। এগুলোকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দল ঘোষণার পর আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতারা প্রথমেই সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ) ও শাহপরাণ (রহ)-এর মাজার জিয়ারত করে দলীয় কর্মকাণ্ড শুরু করবেন। এ ছাড়া মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও জেনারেল ওসমানীর মাজার জিয়ারত করবেন। পরে জেলা কমিটি ও অন্যান্য ইউনিট কমিটি গঠন করবে। পাশাপাশি সব জেলা সফর করার কথা রয়েছে।
দল গঠনের বিষয়ে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরে মোটামুটি সব দল এক সময় না এক সময় ক্ষমতার ভাগ পেয়েছে। আমরা নতুন দল। আমরা মনে করি, এই ৫০ বছরে রাজনীতির পলিসিতে অনেক ভুলত্রুটি আছে। সেগুলো সংশোধন করার জন্য নতুন কিছু দরকার। পুরনো যারা ভুল করেছে, তাদের ওপর এখন ভরসা করা যাচ্ছে না। যারা এখন কাজ করছে, তারা সব শিক্ষিত ছেলেমেয়ে, সোশ্যাল মিডিয়া-ইন্টারনেটের যুগের মানুষ, তারা অনেক কিছু বোঝে। তাদের ভুল তথ্য দিয়ে ভোলানো যাবে না। তারা বুঝতে পারছে রাষ্ট্রে পুরো অবকাঠামোর মধ্যে অনেক ত্রুটি ছিল; এগুলো ঠিক করতে হবে। সেগুলো করার জন্যই নতুন দল।’
রেজা কিবরিয়া আরো বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। প্রথম কথা হচ্ছে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগের গত নির্বাচনের মতো প্রতারণার কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।’
ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা আগামী ২০ ও ২১ অক্টোবর নতুন দল ঘোষণার চিন্তাভাবনা করছি। দুটি নাম ঠিক করা হয়েছে, একটি চূড়ান্ত করা হবে। গঠনতন্ত্র ওইভাবে এখন হবে না। একটা ঘোষণাপত্র থাকবে। কেন স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটি রাজনৈতিক দল করার প্রয়োজনীতা বোধ করলাম, বর্তমান সংকটকে কেন্দ্র করে কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি, আহ্বায়ক কমিটি কীভাবে পরিচালনা করা হবে এসবের দিকনির্দেশনা থাকবে সেই ঘোষণাপত্রে। দল গোছানোর পর আমাদের চিন্তা আছে জেলা কমিটিগুলো দেওয়া। নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের আবেদন করব। সেটির জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও দলের ঘোষণা নিয়ে কাজ করছি। একইভাবে জেলা-উপজেলা কমিটির কাজ চলছে। আমাদের অনেক কাজ হয়েও আছে।’