দেশের খবর : প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাচ্ছেন ৩০ ডিসেম্বর। তিনি অবসরে গেলে কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি-এ নিয়ে বিচারাঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। প্রথা অনুযায়ী পরবর্তী সিনিয়র বিচারপতিই প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হবে কি হবে না-সেই প্রশ্নও সংশ্লিষ্টদের।
অবশ্য এর আগে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দৃষ্টান্ত রয়েছে। যদিও সংবিধানে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া উচিত। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। তার পরের অবস্থানে রয়েছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
তাদের মধ্যে একজন হবেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি। তবে সম্ভাব্য প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। একটি সূত্র মনে করে, বর্তমানে আপিল বিভাগে কর্মরত সব বিচারপতিরই প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা রয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়। সে হিসাবে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর। প্রধান বিচারপতির শেষ কার্যদিবস হচ্ছে ওইদিন।
এদিকে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর অবকাশকালীন ছুটি রয়েছে। সেই ছুটি যদি বহাল থাকে, তাহলে প্রধান বিচারপতির শেষ কার্যদিবস হচ্ছে ১৫ ডিসেম্বর। কারণ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, আর ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন পদে আছেন আর মাত্র ৪৯ দিন (১২ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর)।
রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’
সংবিধানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেবেন, তার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রথমে আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।
এরপর মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল প্রস্তুত করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট জারি করবে আইন মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, সংবিধানে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হলে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে তিনি যে কোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দিতে পারেন। এতে কোনো বাধা নেই।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা উচিত নয় বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, যদিও সংবিধানে এ বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলা নেই, তারপরও এটা করা ঠিক না। যাকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া হলো তিনি এক বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে চলে যেতে হয়, এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রহুল কুদ্দুস কাজল মনে করেন, বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া দরকার। নিয়োগের ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, কিংবা দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্য-এসব বিবেচনায় না এনে বিচার বিভাগের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পদত্যাগ করলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তী সময়ে বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির পদে থাকাকালীন প্রধান বিচারপতি হিসাবে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নিয়োগ চূড়ান্ত করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। এ নিয়োগের দিন (২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার তখন চাকরির মেয়াদ ছিল আরও ১০ মাস।
এখানে নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনায় কোনো সাংবিধানিক ব্যত্যয় ঘটেছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছিল তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেও সাতবার ঘটেছে। তবে এতে সংবিধানের লঙ্ঘন হয়নি। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার মহামান্য রাষ্ট্রপতির। সংবিধান অনুযায়ী তিনি আপিল বিভাগের যে কোনো একজন বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দিতে পারেন। সবচেয়ে সিনিয়রকে নিয়োগ দিতে হবে-এমন কোনো কথা নেই।’সূত্র: যুগান্তর