নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা শহরের রইচপুরে উদ্ধারকৃত ৫৮০ বিঘা খাস সম্পত্তি ভূমিহীনদের মাঝে বন্টরের দাবিতে স্মারক লিপি প্রদান করেছে সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতি।
গতকাল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর এ স্মারক লিপি প্রদান করেন তারা।
স্মারক লিপিতে জেলা ভূমিহীন সমিতি বলেন, সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অন্যতম জেলা। এ জেলায় প্রায় ৭৯ হাজার একর খাস সম্পত্তি রয়েছে।
যে গুলোর অধিকাংশই ভূমিদস্যুরা জোর পূর্বক দখল করে ভোগ দখল করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মাথা গোঁজার ঠাই না পেয়ে বিভিন্ন খালের পড়ে, রাস্তার ধারে টোং তৈরি করে মানবেতর জীবন-যাপন করে যাচ্ছেন ভূমিহীন হাজার হাজার পরিবার। বিগত ২০১৭ সালে তৎকালিন জেলা প্রশাসক একেএম মহিউদ্দীন মহোদয় মরহুম ভূমিদস্যু ইমাম আলীর দখলে থাকা শহরের পলাশপোল মৌজায় ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্তভোগী ১২৮০, ৪২৩৮, ৮২৩১, সাবেক দাগ ১৪০০, রইচপুর এলাকার ৫৮০ বিঘা সম্পত্তি উদ্ধার করে। উদ্ধার পর জেলা শহরের বাহ বাহ কুড়ান তিনি।
উক্ত সম্পত্তি ভুমিহীনদের মাঝে বন্টনের জন্য সে সময় সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির পক্ষ থেকে তৎকালিন জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও দু:খ জনক বিষয় হলো উদ্ধারের পর মৌখিকভাবে সম্পত্তি দেখাশোনা করার দায়িত্ব প্রদান করেন কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু সহ কয়েকজনের উপর। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উক্ত সম্পত্তি নিজে ৯০ বিঘা দখলে রেখেছেন। কালুর সহযোগি রুহুল কুদ্দুস ৭৫ বিঘা সম্পত্তির ঘের করেন। বাকী ৪১৫বিঘা সম্পত্তি বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে বাৎসরিক হারি হিসেবে প্রদান করে। হারির টাকা কাউন্সিলর কালু উত্তোলন পূর্বক নিজেই ভোগ দখল করে এবং নিজের দখলে থাকা সম্পত্তিতে মৎস্য চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাথ করে যাচ্ছে। উক্ত সম্পত্তির দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে অবৈধভাবে একাধিক ব্যক্তিদের কাছে খাস সম্পত্তি লীজ দেওয়ার নামে টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখল করে এবং লীজ বানিজ্য করে পৌর ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি কাউন্সিলর শেখ জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, রুহুল কুদ্দুস গং প্রতিবছর কোটি কোটি আত্মসাথ করছে এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন।
সম্প্রতি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে স্থানীয় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন কালু, রুহুল কুদ্দুস, জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে মিল জাহাঙ্গীর, মিজানুর রহমান ও ফজলু ঢালী বিঘা প্রতি ৪ হাজার টাকা উত্তোলন করছে। এই সিন্ডিকেটের সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কতিপয় কর্মচারী জড়িত রয়েছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের জন্য মুজিববর্ষের গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায়ও অনেক ভূমিহীন মুজিববর্ষের গৃহ পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও হাজার হাজার ভূমিহীন রয়েছে। পক্ষান্তরে অনেক ভূমিহীনরা পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই প্রচন্ড শীতের মধ্যে কেউ কেউ ভেড়ী বাধের উপর পলেথিন টানিয়ে পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছে। উক্ত খাস জমি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি দেড় বিঘা খাস জমি বন্টন করা হলে সাতক্ষীরা জেলায় একটি পরিবারও ভূমিহীন থাকবেনা, থাকবেনা ভূমিহীন ভূমিদস্যুদের মধ্যে বিরোধ, সাতক্ষীরা হবে শান্তির জেলা, মডেল জেলা, এটি হবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভূমিহীনদের জন্য একটি অবিস্মরনীয় ঘটনা হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তারা।
এসময় সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি কওছার আলী, সাধারন সম্পাদক আব্দুস সামাদসহ জেলা ভূমিহীন সমিতির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।