নিজস্ব প্রতিনিধি : যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকা পড়েছে বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। বৃহষ্পতিবার রকেট হামলার কবলে পড়ে জাহাজটির এক নাবিক নিহত হয়েছেন।
জীবিত দুই জন নারী ক্যাডেটসহ ২৮ জনকে শুক্রবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ইউক্রেনের একটি বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র অতিরিক্ত ক্যাপ্টেন মনসুরুল আমিন খান (৩৬)। তিনি সাতক্ষীরা শহরের নারকেলতলা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত বিআরডিসি কর্মকর্তা নুরুল আমিন খান ওরফে সেলিম খানের ছেলে। মনসুরুল আলম খান এলাকায় গিনি নামেই পরিচিত।
মনসুরুল আলম খানের বাবা জানান, বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় বাড়িতে কথা বলেছেন গিনি। জানিয়েছেন, ভালো আছেন।
সন্ধ্যার দিকে ইউক্রেনের ওয়ালভিয়া বন্দরে তাদের নামানো হয়েছে। বর্তমানে সেখানেই আছেন।
সেলিম খান জানান, ছেলের জন্য বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত। চরম উদ্বিগ্নতার মধ্যে আমাদের দিন কাটছে। ওর মা মর্জিনা খানম ও স্ত্রী আশরুকা সুলতানা সারাদিন কান্নাকাটি করছে। কারো সামনে আসতে চাচ্ছে না। তারা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন।
তিন ছেলের জনক মনসুরুল আলম খান। ফাহিমি ও ফারহান (১০) যমজ, তারা ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে ফারদিনের বয়স তিন বছর।
সেলিম খান বলেন, গিনি ১৯৯৯ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে এস এস সি পাশ করেন, ২০০১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে ২০০২ সালে শীপে যোগদেন। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর থেকে কোর্স সম্পন্ন করে ২০০৬ সালে জাহাজের ক্যাপ্টেন পদে চাকরি শুরু করে গিনি। সবশেষ তিন মাস আগে বাড়িতে এসেছিল। ৬-৭ মাস পর পর বাড়িতে আসে। ইউক্রেনে গিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আটকা পড়বে, এটি কেউ ধারণা করেনি। জাহাজে রকেট হামলার পর আজ প্রথম কথা হয়েছে। সেখানে খাবারের সমস্যা হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খাচ্ছে জাহাজে আটকা পড়া বাংলাদেশিরা। নেটওয়ার্ক ও ফোনে চার্জ না থাকায় খুব বেশি যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিপিং অফিস থেকে যোগাযোগ করে বলেছে, আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি, আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইউক্রেনিরা মাইন বসিয়ে রাখায় জাহাজটি বের হতে পারেনি।
ক্যাপ্টেন মনসুরুল আলম খানের বোন সাবরিনা খান মৈত্রী বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন। আশা করছেন তার ভাই নিরাপদে বাড়িতে ফিরবেন। তবে গতরাতে ভাইয়া জানিয়েছেন, আমার ইউক্রেনের বাংকার নেমেছি। এখনো পুরোপুরি নিরাপদ বলা যাচ্ছে না। পোলান্ড সীমানায় পৌছাতে পারলে পুরোপুরি নিরাপদ বলা যাবে। এখান থেকে পোলান্ড ৮ শ কিলোমিটার। ফলে দ্রুত সেখানে পৌছানোও যাচ্ছে না।
ক্যাপ্টেনের বড় ছেলে ফারহান বলে, জাহাজে ২৯ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছেন। আব্বু বেঁচে আছেন। সেখানে খাবারের কষ্ট হচ্ছে, অল্প খাচ্ছেন। জাহাজে পানি ঢুকে গেছে। বাড়ির সবার মন খারাপ। আব্বুকে ফিরিয়ে আনুন আপনারা।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির বলেন, বিষয়টি শুনেছি জাহাজের ক্যাপ্টেন একজনের বাড়ি সাতক্ষীরায়। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এমন কোনো ম্যাসেজ এখনও আমরা পাইনি।#