আসাদুজ্জামান ঃ প্রেম সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার তালায় কলেজ ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া এলাকা থেকে বুধবার বিকালে তাকে গ্রেপ্তারের পর আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তালা থানা পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করেন।
এর আগে গত সোমবার তাকে উপজেলা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে জেলা ছাত্রলীগ। একই সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়।
জানা যায়, গত রোববার (২৪ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা ৫ ঘন্টা তালা সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে ওই কলেজ ছাত্রকে আটকে রেখে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব (২৫), হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের গণেশ চক্রবর্তীর ছেলে ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী (৩২), তালা গার্লস স্কুলের পেছনের বাসিন্দা ছাত্রলীগ কর্মী জে.আর সুমন (২৫), তালার মহান্দি গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী জয় (২৪) ও তালা সদরের নজির শেখের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎস (২৪)।
এ ঘটনায় গত সোমবার নির্যাতিত কলেজ ছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময়ের বাবা শেখ আজিজুর রহমান বাদী হয়ে উক্ত ৫ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর নামে তালা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময় তালা সদরের জাতপুর গ্রামের শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। তিনি জাতপুর টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য খুলনায় কোচিং করছেন।
নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্র তন্ময় জানান, ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ হাসান উৎসের মাধ্যমে আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে আকষ্মিক মারপিট শুরু করে উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আকিব, শ্রমিকলীগ নেতা সৌমিত্র চক্রবর্তী, ছাত্রলীগ কর্মী জে.আর সুমন ও জয়। তালা কলেজের পশ্চিম পাশে একটি রুমের মধ্যে নিয়ে টানা ৫ ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতন চালায় তারা। হাতে, পায়ে নির্মমভাবে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এরপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে এবং বাড়িতে ফোন দিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে তারা। তন্ময় আরও জানান, যে রুমের মধ্যে আমাকে আটকে রেখেছিল সেটা সম্ভবত কলেজের ছাত্রবাস কক্ষ। ওই রুমের মধ্যে মারপিট করার জন্য বেল্ট, লাঠিসোটা এখনো রয়েছে। ওখানে নিয়ে টর্সার করা হয় বলে মনে হয়েছে। সেখান থেকে আমার চাচাতো ভাইয়েরা আমাকে উদ্ধার করে।
তন্ময়ের বাবা আজিজুর রহমান জানান, রবিবার সন্ধ্যায় ছেলেকে উদ্ধারের পর তালা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর রাতে থানায় এজাহার জমা দিতে গেলে থানার মধ্যেই আমাকে হুমকি দিতে থাকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা এক সন্ত্রাসীর বাবা। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে গিয়েও হুমকি ধামকি দিচ্ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তাহীনতার কারনে গত সোমবার বেলা ১২টার দিকে তন্ময়কে বাড়িতে নেওয়া হয়। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ছাত্রলীগের নেতা আকিবের সাথে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি আকিবের সাথে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। নতুন করে সম্পর্ক গড়ে উঠে তন্ময়ের সাথে। তন্ময়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে আকিব তাকে নাহিদের মাধ্যমে ডেকে এনে মারপিট ও মাথা টাক করে দেয়।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তালা থানার এসআই চন্দন জানান, মামলার প্রধান আসামি আকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।