নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার তালায় সরকারি মৎস্য হ্যাচারির প্রায় ১২শ’ ফুট সীমানা প্রাচীর নির্মাণে নিন্মমানের উপকরণ সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণ সামগ্রী ল্যাবে টেস্ট’র পর তা ব্যবহারের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি প্রাচীরটি নির্মাণে হ্যাচারিতে রক্ষিত পুরাতন ইট,খোঁয়া ও নি¤œমানের রড ব্যবহার হচ্ছে। এক কথায় নাম মাত্র কাজ করে লোপাট হচ্ছে বরাদ্দের প্রায় সমুদয় অর্থ।
তালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মোঃ হাদিউজ্জামান বলেন, সার্বক্ষণিক নাকি তিনিই কাজের তদারকি করেন। তবে মাঝে মাঝে তার ব্যস্ততায় তার পিয়ন মফিজ কাজের তদারকি করে থাকেন।
সূত্র জানায়, ৩৮ লক্ষ ব্যয়ে প্রাচীরটি নির্মাণে কাজ শুরুর আগে বরাদ্দ’র তথ্য সম্বলিত সাইন বোর্ড টানানো ও নির্মাণ কাজের উপকরণ সামগ্রী ল্যাব টেস্টের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। নির্মাণ কাজে নতুন ১নং ইটের পরিবর্তে পূর্ব থেকে হ্যাচারিতে রক্ষিত পুরাতন নি¤œমানের ইট ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকমত কাজ তদারকি না করে ঠিকাদারের সাথে গোপনে চুক্তি করে বরাদ্দের প্রায় সমুদয় টাকা লোপাট করছেন।
তালা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা মৎস্য বীজ হ্যাচারি প্রকল্প’র সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। প্রায় ৩৮লাখ টাকা ব্যায়ে গত ১মাস আগে এ কাজ শুরু হয়ে তা চলমান রয়েছে। ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস মোনালিসা কনস্ট্রাকশন এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে তালা উপজেলা বীজ হ্যাচারি প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, বরাদ্দ’র তথ্য সম্বলিত কোন সাইনবোর্ড প্রকল্প এলাকায় নেই। রড দেওয়া হয়েছে নিন্ম মানের। পূর্বে হ্যাচারিতে পড়ে থাকা পুরাতন ইট দিয়ে খোঁয়া তৈরি হচ্ছে। এই খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে প্রাচীরের কাজে। এসময় সেখানে কাজের তদারকির মত কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদার নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্য পূর্বে হ্যাচারিতে পড়ে থাকা পুরাতন ইট দিয়ে খোঁয়া তৈরি করেছে। ওই খোঁয়া দিয়ে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে সীমানা প্রাচীরের কাজে ঢালাই দেয়া হয়। সেদিন কোন প্রকৌশলীও আসেন না। মৎস্য কর্মকর্তা কাজটি তদারকির প্রধান দায়িত্বে থাকলেও তিনি কাজ তদারকি করেন না। ঠিকাদার তার ইচ্ছামত কাজ করছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কাজটি দেখার কেউ নেই।
ঠিকাদারের নিয়োজিত কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা মোতাসিন বিল্লাল জানান, ঠিকাদার আমাকে যেভাবে কাজ করতে বলেছেন সেভাবে করছি। তবে টেষ্ট রিপোর্ট, সাইন বোর্ড এবং পুরাতন ইটের দিয়ে বেজ তৈরি করার কথা সত্যতা স্বীকার করেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রকৌশলী গৌতম কুমার জানান,তার জানামতে কাজে কোন প্রকার অনিয়ম বা দূর্নীতি হচ্ছেনা। কোন প্রকার অনিয়মের নাকি সেখানে সুযোগও নেই। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন,বেজ ঢালাইয়ের সময় সাপোর্টিয়ে কিছু পুরনো খোঁয়া দেয়া হয়েছিল যা পরে উঠিয়ে নেয়া হয়।
খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান জানান, পুরাতন ইট ব্যবহার করার কোন নিয়ম নেই। কাজে অনিয়ম থাকলে খতিয়ে দেখা হবে।
এব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আলিমুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি তার অধিভূক্ত নয়। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তার কাছে নেই।
এব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ’র নিকট তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুরনো ইট দিয়ে কাজ করার কোন বিধান নেই। যদি ঠিকাদার তা করে থাকেন তা হরে সে অন্যায় করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট