দেশের খবর: বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আগামী জাতীয় আগামী নির্বাচনে করণীয় সম্পর্কে নিজেদের মতামত দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা।
রোববার (১২ জুন) নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে তারা নিজেদের এই মতামত তুলে ধরেন।
সংলাপে সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ দরকার। আমি জিতব, অবশ্যই জিতব- এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের দরকার নেই। নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী কোনো কাজে আসে বলে আমি মনে করি না।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ.টি.এম. শামসুল হুদা বলেন, সব দল না আসলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলকে কীভাবে নির্বাচনে আনবেন সেটা আপনাদের ক্ষমতা ও বোঝানোর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে।
তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দল একটি গণতান্ত্রিক দেশে বেশি দিন নির্বাচনের বাইরে থাকতে পারে না। উই হ্যাভ টু ক্রিয়েট দ্যাট এনভায়রনমেন্ট (সেই পরিবেশটা আমাদের তৈরি করতে হবে)।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রুলি ইলেকটেড (সত্যিকারের নির্বাচিত) সরকার আসুক, মাস্তানি কমে যাক।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, ‘আপনারা যদি এজ ইট ইজ রাখেন, কোনো চেঞ্জ করতে না সাহস না করেন, তাহলে প্রতি ৫০০ জনের জন্য ১টি পোলিং স্টেশন তৈরি করুন। এতে ভোটের সময় কমে যাবে, ৮টা থেকে ১২টার মধ্যে ভোট শেষ হবে। দিনে দিনে ভোট গণনা শেষ করতে পারবেন। যে জিনিসটা সবচেয়ে খারাপ- ভোট গণনার সময় শুরু হয় সন্ধ্যার পর। আর আমরা দেখি সন্ধ্যার পর জিন, ভূত যা কিছু আছে সব দেখা যায়। বাতি নিভতে শুরু করলে শুরু হয় তাদের আনাগোনা।’
কে এম নুরুল হুদা ২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, এ.টি.এম. শামসুল হুদা ২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং বিচারপতি আব্দুর রউফ ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মনে করেন, বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীন ন্যস্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার মতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের একটাই চ্যালেঞ্জ। তা হলো সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
অন্যদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচন বিশ্বমানের হতে হবে। বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকার দরকার। গ্রহণযোগ্য সরকারই কেবল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে বলেও মনে করেন সাবেক এই কমিশনার।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’, অর্থাৎ সবার জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের তাঁদের নিজস্ব এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসকের বদলে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাঁদের স্থলাভিষিক্ত করা প্রয়োজন। যদি একান্তই জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়ের আগে তাঁদের ভিন্ন জেলায় বদলি করা আবশ্যক।
বর্তমানে সংলাপের যে ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা গতানুগতিক মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, বিগত কমিশনগুলোর সংলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যা, আমন্ত্রিত সুধীজন প্রায় একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। ইভিএম বা ভোটকেন্দ্রের পাহারা এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ নয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশনের অধীন ন্যস্ত করতে হবে। পুলিশের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সংলাপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, আমি যে রূপরেখা উপস্থাপন করলাম, তার বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করা অপরিহার্য। নির্বাচনী আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধিবিধান পরিপালনে শূন্য সহিষ্ণু নীতির কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান সংশোধন না করা হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন করা যাবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।