রামপালে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহন সহজ করতে নদীতে যে খনন কাজ চালানো হবে তা জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে এক গবেষণায় বলা হচ্ছে। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার অনুরোধে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন মার্কিন ও অস্ট্রেলিয়ান দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যারা ভূমি, জলজ জীব বৈচিত্র্য ও কোরাল রীফ নিয়ে গবেষণা করেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বছরে ৪৭ লক্ষ টন কয়লা আমদানি করতে হবে। এই কয়লা সুন্দরবনের পশুর নদী দিয়ে রামপাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। কয়লার পরিবহন পথে যে নদী ও চ্যানেলগুলো রয়েছে তা সারা বছর খনন করতে হবে।
কয়লা পরিবহনে কি পরিমাণে জাহাজ চলাচল হবে তার একটি খতিয়ান দিয়ে বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন বলছেন, “আকরাম পয়েন্ট পর্যন্ত বড় আকারের জাহাজগুলি আসবে। তারপর ছোট জাহাজে কয়লা স্থানান্তর করে রামপাল আনতে হবে। বছরে ১৪৫ দিন বড় আকারের জাহাজ চলাচল করবে। ছোট জাহাজগুলো চার পাঁচশো বার চলাচল করবে। এই পরিমাণে জাহাজ চলাচল সহজ করার জন্য নদীতে প্রচুর ড্রেজিং করতে হবে।”
এই বিপুল পরিমাণে ড্রেজিং ও জাহাজ চলাচলে নদীর ওপর কি প্রভাব পড়বে সে নিয়ে সরকার একটি ইআইএ বা পরিবেশগত সমীক্ষা করেছে। ইআইএ প্রতিবেদনটিকে মূল্যায়ন করেছেন ঐ দুই গবেষক। তারা বলেছেন, সরকারের প্রতিবেদনে প্রচুর পরিমাণে তথ্য ঘাটতি রয়েছে এবং এটি একটি অসম্পন্ন ইআইএ।
মতিন বলেছেন, সারা বছর খনন ও জাহাজ চলাচল ঐ নদী ও চ্যানেলগুলোর জলজ প্রাণীর ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। অনেকগুলো বিষয় ঘটবে। যখনই খনন কাজ হবে এবং সারা বছর ধরে বারবার খনন হবে তখন পানি ঘোলা হয়ে যাবে। যার কারণে পানিতে সূর্যের আলো ঢুকবে না। পানিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকার কথা তা থাকবে না। মাছের খাবার তৈরির প্রক্রিয়া ও ডিম পাড়ার চক্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যার ফলে কিন্তু মাছ চলে যাবে। জীব বৈচিত্র্য পুরোটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
তার মতে সরকার জাহাজ চলাচলকে প্রাধান্য দিচ্ছে, জীব-বৈচিত্রকে নয়। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক ও প্রতিবাদ চলছে। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এই কেন্দ্রটি যার অবস্থান সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন লিমিটেডের সাথে যৌথভাবে এটি তৈরির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে।
ব্যাপক বিরোধিতার মধ্যে সরকার স্পষ্ট করে বহুবার জানিয়ে দিয়েছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবেই। বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেছেন, তারা নতুন এই প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বিগ্ন নন। আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই এই জন্য যে পরিবেশকে রক্ষার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়ার তার সবই এখানে গ্রহণ করা হবে। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর উন্নত বিশ্ব আমরা যাদের বলি তারাও তাদের পরিবেশকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিলিয়ন্স অফ টনস প্লাস্টিকের বোতল সমুদ্রে ফেলা হয়। বাংলাদেশে সরকারতো দেশেরই সরকার। দেশের ক্ষতি হবে সরকার এমন মনে করার যৌক্তিক কোন কারণ নেই।
বাংলাদেশে সরকার সবসময়ই কয়লা ঢেকে পরিবহনের সর্বোচ্চ আধুনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করার কথা বলে আসছে। কিন্তু ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়লা বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে স্থানান্তর ও পরিবহনের সময় পানিতে তা মিশে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব হবে না। আর ড্রেজিং করার পলি ও কাদার বর্জ্যও বিপদ ডেকে আনবে বলে গবেষকরা বলছেন।
এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে পরিবেশ মন্ত্রী বলছেন, “আমার মনে হয় না। তার কারণ রামপাল সমুদ্রের ভেতরে। রামপাল কোনো নদীর পাশে নয়। এবং কয়লা সমুদ্র পথেই আসবে।” বিবিসি বাংলা