দেবহাটা প্রতিনিধি : দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের পরেও স্বাস্থ্য সেবায় খুশী সাধারণ মানুষ। আর এই চিকিৎসা নিতে আসা সাধারন মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে কর্মরত সকল চিকিৎসকদেরকে করতে হয় কঠিন পরিশ্রম। দেশের সবচেয়ে বেশি যেখান থেকে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে সেটি হলো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই প্রয়োজনীয় জনবল, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ খুবই সীমিত।
বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। যদি সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হয় তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে কার্যকর করতে হবে। একটি যুগোপযোগী অর্গানোগ্রাম তৈরি করে এর জনশক্তি বাড়াতে হবে, পরীক্ষার সব ধরনের সুবিধা থাকতে হবে, পূরণ করতে হবে ওষুধের ঘাটতি। দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি আগে ২৫ শয্যার ছিল।
বর্তমান সরকার আসার পরে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ রুহুল হকের নির্দেশনায় হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরন করা হয়। তারপরে এখানে নির্মান করা হয় নতুন ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য কোয়াটারসহ বিভিন্ন নতুন স্থাপনা নির্মান করা হয়। সাধারন মানুষ সেসময় থেকে এখানে চিকিৎসা নিয়ে খুশী হন।
তবে গত বর্তমানে হাসপাতালটির জন্য যে পরিমান চিকিৎসক বা স্টাফ মঞ্জুরী প্রদান করা আছে তার চেয়ে পুরনকৃত পদের সংখ্যা খুবই সীমিত। কোন কোন পদে ১ জনকেও নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। যার কারনে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষকে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নতুনভাবে চালু হওয়া ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসকদের পদের সংখ্যা ২২টি।
সেখানে আছেন ১৭ জন চিকিৎসক। পুনকন চিকিৎসক ১১ জন থাকার কথা থাকলেও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে প্রেষনে ১জন চিকিৎসক আসেন। চিকিৎসকদের মধ্যে আছেন মেডিসিন, গাইনী, সার্জারী, নাক কান গলা, শিশু, কার্ডিওলজি, চক্ষু, এনেসথেসিয়া, অর্থোপেডিক্স, চর্ম ও যৌন। এছাড়া মেডিকেল টেকনিশিয়ান প্রয়োজন ৭ জন কিন্তু সেখানে আছে ২ জন। রেডিও (এক্সরে) নেই, ল্যাবে ২ জন থাকার কথা কিন্তু সেখানে পূরনকৃত পদ শূন্য। ডেন্টালে পদ শূন্য, ফিজিওফেরাপিষ্ট নেই। ইপিআই আছে ও স্যানিটারী ইন্সপেক্টর আছে। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেনী পদ সংখ্যা আছে ১৩ জন কিন্তু পূরনকৃত পদ আছেন ১২ জন এবং তৃতীয় শ্রেনী ৭০ জনের স্থলে ৫৯ জন ও ৪র্থ শ্রেনী ২১ জনের জায়গায় আছেন ১৯ জন।
এছাড়া হাসপাতালে একটি পুরানো এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও কোন ড্রাইভার নেই। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত আছেন ডাঃ আব্দুল লতিফ। তিনি হাসপাতালের দায়িত্ব নেয়ার পরে হাসপাতালে ফুলের বাগান করাসহ সৌন্দর্যবর্ধন, চিকিৎসার মান উন্নতিকরন, সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরন, রোগীদের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করাসহ যতটুকু সম্ভব সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌছাতে কাজ করছেন। গত মাসে জনগনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটি নাগরিকের জন্য রেফারেল কার্ড চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই কার্ডের মাধ্যমেই একজন মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সহজেই তার সঠিক চিকিৎসা গ্রহন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে পারবেন। দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল লতিফ জানান, তিনি দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে হাসপাতালটি সৌন্দর্য বদ্ধন করাসহ স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ডাঃ লতিফ বলেন, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক হাসপাতালের উন্নতিকল্পে কাজ করা হচ্ছে। সরকারের উদ্দ্যেশ্য ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মানুষ যেন সঠিকভাবে সহজেই চিকিৎসা সেবা গ্রহন করতে পারেন সেজন্য আন্তরিকতার সাথে হাসপাতালের সবাই কাজ করে এবং প্রতিদিন আইটডোরে আনুমানিক তিন (৩) শতের অধিক রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহন করেন বলে ডাঃ লতিফ জানান। হাসপাতালটির আরএমও ডাঃ বিপ্লব কুমার মন্ডল হাসপাতালে বর্তমানে আলট্রাসনোগ্রাফিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ও টিএইচওর নির্দেশনা অনুসরন করে সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় বলেই গত বছরে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স খুলনা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।