নিজস্ব প্রতিনিধি : বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে এক অসাধু ব্যবসায়িকে জরিমানা ও বাগদা বিনষ্ট করিয়ে দেওয়ার অভিযোগে এক ব্যাবসায়িকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। এ সময় তার কাছে থাকা পৌনে ৫ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। রবিবার সাড়ে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল ইউপি’র কুমারখালি কাঠের ব্রীজের উত্তর পাশে এ ঘটনা ঘটে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জখম হওয়া ব্যবসায়ির নাম শান্তি রঞ্জন মিস্ত্রী (৩৮)। তিনি কালিগঞ্জ উপজেলার কুমারখালি গ্রামের হরিদাস মিস্ত্রীর ছেলে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কুমারখালি গ্রামের শান্তিরঞ্জন মিস্ত্রী জানান, একই গ্রামের মনোরঞ্জন মিস্ত্রীর ছেলে আনন্দ মিস্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে তার বাড়ির পাশে একটি ঘরে বাগদা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করিয়া বাজারজাত করে আসছিল। এ নিয়ে তিনিসহ এলাকার বহুলোক প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে কালিগঞ্জ উপজেলা জ্যেষ্ট মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর আনন্দ মিস্ত্রীর চিংড়ি ব্যবসার স্থলে অভিযান চালায়। এতে আনন্দ মিস্ত্রীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা হয় ৩০ কেজি পুশকৃত বাগদা চিংড়ি। জব্দকৃত বাগদা গাড়ির চাকার তলায় ফেলে বিনষ্ট করা হয়। সিলগালা করা হয় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে আনন্দ মিস্ত্রী ও তার সহযোগিরা তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৮ অক্টোবর রাত আনুমানিক সাড়ে সাতটার দিকে তিনি উজিরপুর বাজারের নিকটবর্তী শ্মানঘাটের পাশে অবস্থানকরাকালিন আনন্দ মিস্ত্রী ও তার সহযোগী ব্শিজিৎ মিস্ত্রী, রামপদ তফেদার, মিলন তরফদার, বিপ্লব সরকারসহ কয়েকজন তার কাছে পুশকৃত বাগদা চিংড়ি নষ্ট, জরিমানা করার খেশারৎ ও ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এক সপ্তাহের মধ্যে দাবিকৃত টাকা না দিলে তাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়।
শান্তিরঞ্জন মিস্ত্রী আরো জানান, রবিবার দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের বাগদা ও গলদা রেনুর ব্যবসায়ি “অর্ণব ফিশ’ এর স্বত্বাধিকারী স্বপন কুমার মণ্ডলের কাছ থেকে চার লাখ টাকা ও শহরের প্রধান ডাকঘর থেকে ৭৩ হাজার ৪৪০ টাকা তোলেন। এটাকা নিয়ে তিনি রবিবার বাড়ি ফেরার পথে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে কুমারখালি কাঠের ব্রীজের উত্তর পাশে আসা মাত্রই অঅগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আনন্দ মিস্ত্রী, বিম্বজিৎ মিস্ত্রী, রামপদ তরফদার,, মিলন তরফদার ও বিপ্লব সরকারসহ কয়েকজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে। এ সময় আনন্দ মিস্ত্রীসহ সকলে তার কাছে দাবিকৃত ১০ লাখ টাকা চায়। দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে লোহারড রড ও দা দিয়ে মাথায় দুই হাতে, পায়ে, বুকে ও পিঠে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করা হয়।
ছিনিয়ে নেওয়া হয় তার কাছে থাকা পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। তার আত্মচিৎকারে পরিবারের সদস্য, স্থানীয় লোকজন ও পথচারিরা ছুঁটে আসায় হামলাকারি চাঁদাবাজরা বাকি সোয়া ৫ লাখ চাঁদার টাকা আগামি ১৫ দিনের মধ্যে না দিলে তাকে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। স্থানীয়রা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সোমা দাস জানান, শান্তিরঞ্জন দাসের বাম হাতের অনামিকা আঙুল ভেঙে গেছে। এ ছাড়া তার মাথায়, ডান হাতের বাহুতে, ডান পায়ের উরুতে, ডান পায়ের প্যাটেলা, পিঠে ও কানে ভারী জিনিস ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হালিমুর রহমান বাবু জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন। তবে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এনিয়ে তার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে।