নিজস্ব প্রতিনিধি :
বাকপ্রতিবন্ধী স্বামীসহ মারপিটের প্রতিকার চেয়ে মামলা করায় বিপাকে পড়েছেন এক অসহায় গৃহবধু। প্রতিবন্ধী স্বামী এবং সন্তান নিয়ে বাড়ি ছাড়া হয়ে পথে পথে ঘুরছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুর গ্রামে।
পর সম্পদলোভী ও পরনারী আসক্ত দেবর এবং ভাসুরপুত্রের মুর্হুমূহু হুমকিতে বাড়িতে ফিরতে পারছেন নাই ওই দম্পত্তি।
জানাগেছে, আনুমানিক ৫ থেকে ৬ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে শ্যামনগর উপজেলার আ: সবুর ঢালীর পুত্র বাকপ্রতিবন্ধী আইয়ুব আলীর সাথে বিবাহ হয় সাতক্ষীরা শহরের গড়েরকান্দা গ্রামের হাবিবুর রহমানের কন্যা হোসনেয়ারার। বিবাহের পর থেকে হোসনেয়ার বাকপ্রতিবন্ধী স্বামীকে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করে আসছিলেন। কিন্তু স্বামী প্রতিবন্ধী হওয়ায় পরনারী আসক্ত দেবর ইউসুফ আলী প্রায়ই হোসনেয়ারাকে কু প্রস্তাব দিতো।
এতে রাজি না হওয়ায় ইউসুফ আলী ক্ষিপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এর জেরে প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনায় হোসনেয়ারাসহ তার স্বামী আইয়ুব আলীকে গালি গালাজকরাসহ মারপিট করতে থাকে। এ নিয়ে হোসনেয়ারা প্রতিবাদ করার ওই প্রতিবন্ধী আইয়ুব আলীর নামীয় ১০ কাঠা জমিসহ ভিটেবাড়ী থেকে উচ্ছেদের চক্রান্ত করতে থাকে ইউসুফ এবং বিভিন্ন কৌশলে বাকপ্রতিবন্ধী আইয়ুব আলীর কাছ থেকে লিখে নেওয়ার চেষ্টাও করে।
কিন্তু স্বামীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হোসনেয়ারার প্রতিবাদের কারনে সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে সুচতুর ইউসুফ কৌশলে তার পিতা-মাতা এবং ভাইপোকে ম্যানেজ করে বাকপ্রতিবন্ধী ভাইসহ তার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার একপর্যায়ে গত ৪ নভেম্বর ২২ তারিখে পরিকল্পিতভাবে বাকপ্রতিবন্ধী ভাই এবং তার স্ত্রীর উপর হামলা করে। এসময় ইউসুফ আলী অসৎ উদ্দেশ্যে ভাইয়ের স্ত্রী হোসনেয়ার পরনের জামা কাপড় টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। ইউসুফের সাথে তার ভাইপো খালিদ হাসান, পিতা আব্দুস সবুর, ননদ রাবেয়া খাতুন, ভাসুরের স্ত্রী সালেহা বেগমসহ কতিপয় ব্যক্তি বাকপ্রতিবন্ধী আইয়ুব আলী এবং তার স্ত্রী হোসনেয়ারা খাতুনকে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। সে সময় হোসনেয়ারার গলাই থাকা সোনার চেইন, কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এছাড়া এনিয়ে বাড়াবাড়ি করলে খুন জখমসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে ইউসুফ আলী। এঘটনায় উপায়ন্তর হয়ে শ্যামনগর থানায় অসহায় হোসনেয়ারা খাতুন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ০৬, তাং – ০৫/১১/২০২২।
মামলার খবর পেয়ে উল্লেখিত ইউসুফ আলী, খালিদ হাসানগং আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং বাকপ্রতিবন্ধী আইয়ুব আলী ও তার স্ত্রীকে প্রকাশ্যে খুন জখমসহ বিভিন্ন হুমকি ধামকি প্রদর্শন করতে থাকে। জীবনের ভয়ে অসহায় হোসনেয়ারা স্বামী সন্তান নিয়ে বাড়ীতে ফিরতে পারছেন না। একমাত্র সন্তানসহ প্রতিবন্ধী স্বামীকে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি।
অসহায় হোসনেয়ারা জানান, স্বামী বাক প্রতিবন্ধী হলেও বংশীপুরের একটি মাছের কাটায় কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। কিন্তু বাড়ি ফিরতে না পারায় বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। তিনি ওই ইউসুফ আলী এবং খালিদ হাসানসহ অন্যান্য আসামীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির পাশাপাশি যাতে স্বামী সন্তান নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এবিষয়ে মামলার প্রধান আসামী ইউসূফ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মারপিটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি মারপিটের ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি।
তারা বাড়িতে উঠতে পারছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা যখন করেছে তখন এত সহজে তো বাড়ি উঠতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার করা যেত। কিন্তু সেটি না করে তারা মামলা করেছে। আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এখন বললেই তো আর বাড়িতে উঠতে দেওয়া যাবে না।