নিজস্ব প্রতিনিধি : সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর বাজারের আলোচিত সেই জায়গা অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে তিন ব্যবসায়ী ফিরে পেয়েছে। গত বুধবার দুপুরে জায়গা ফিরে পেয়ে ঐ তিন ব্যবসায়ী নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেছে। জানা যায়, ব্রহ্মরাজপুর বাজার বণিক সমিতির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ধুলিহর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক তহশীলদার রফিকুল ইসলামের যোগসাজসে সাবেক সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরা পারভীনকে ভুল বুঝিয়ে গত ইং ৫/০৯/২০১৬ তারিখে তরকারী বাজার থেকে ৫ ব্যবসায়ীর দোকান ভেঙে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেতকৃত ব্যবসায়ীরা হলো ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের মৃত শুকুর আলী গাজীর পুত্র মো: কেরামত আলী, উমরাপাড়া গ্রামের মৃত ওমর আলী গাজীর পুত্র মো: সাজ্জাত হোসেন, ধুলিহর বালুইগাছা গ্রামের মৃত অধর চন্দ্র পালের পুত্র বীরেন্দ্র নাথ পাল, কাজীরবাসা গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র আনারুল ইসলাম ও একই গ্রামের মৃত বাকের আলী সরদারের পুত্র মো: ময়নুদ্দীন।
অভিযোগ আছে, নায়েব রফিকুল ইসলাম ওই সমস্ত অস্থায়ী দোকান ঘর বন্দোবস্ত দেওয়ার নামে কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে গ্যাড়াকলে পড়ে সবার টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করে নায়েব রফিকুল। এ সব কিছুর যথেষ্ট প্রমাণ ও রয়েছে। এসব ঘটনার জের ধরে ওইসব ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ধুলিহর তহশীলদার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই জায়গা দখলে নিতে নায়েবের সাথে যোগসাজস করে ব্রহ্মরাজপুর বাজার বণিক সমিতির কতিপয় ৩ কর্মকর্তা। এতেও নায়েব রফিকুল মোটা অংকের টাকার ফায়দা লোটে। এরই ফলশ্রুতিতে ওই জায়গা থেকে ৫ ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়। এসব বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে নায়েব রফিকুলকে গত ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ধুলিহর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলী করা হয়। এদিকে ওই ৫ ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদের পর তারা পুনরায় জায়গা ফিরে পেতে বিভিন্ন মহলে ধর্না দিতে থাকে। এরই মধ্যে উচ্ছেদকৃত জায়গায় সরকারি আইন অমান্য করে লাল ফিতা ছিড়ে ব্রহ্মরাজপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক শেখ আ: ছালাম ও কোষাধ্যক্ষ শেখ ফারুক হোসেন মিলে ৪ ব্যবসায়ীকে বসিয়ে দেয়। এদের মধ্যে ২ জন পূর্বে উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। তবে সরকারি উচ্ছেদকৃত জায়গায় বসিয়ে দেওয়ার শর্তে ৩ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বাজার কমিটির ওই ৩ কর্মকর্তা ৬০ হাজার হাজার টাকা গ্রহন করেছে বলে লিখিত স্বীকারোক্তি রয়েছে। পূর্বের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জায়গা না দিয়ে অন্যের কাছে এসব জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় বাজার ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিজেদের দখলীয় জায়গা বঞ্চিত হওয়ায় জায়গা ফিরে পেতে প্রকৃত ব্যবসায়ী সাজ্জাত, কেরামত ও বীরেন্দ্র নাথ পাল প্রশাসন সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দেয়। এতে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে শেষমেষ তারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের দ্বারস্থ হয়। পূর্বের প্রকৃত ব্যবসায়ী ও উচ্ছেদকৃত জায়গার মালিকদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলে একাধিকবার সুপারিশও করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। সর্বশেষ গত ৯ জুন জায়গা বঞ্চিত ওই ৩ ব্যবসায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা জানালে তাৎক্ষনিক বিষয়টি অতি দ্রুত নিষ্পত্তি ও সমাধানের জন্য ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এস,এম শহিদুল ইসলামের উপর দায়িত্ব দেন। গত বুধবার ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান জায়গা সংক্রান্ত জড়িত উভয়পক্ষকে ডেকে শুনা-বুঝা করলে জায়গাটি উচ্ছেদকৃত ওই ৩ ব্যবসায়ীর বলে নিশ্চিত হয়। এ সময় চেয়ারম্যান জায়গার প্রকৃত মালিক ও ব্যবসায়ীদের উক্ত জায়গায় ব্যবসা করার নির্দেশ দেন। বাজারের অধিকাংশ দোকানদার উচ্ছেদকৃত ব্যবসায়ীরা জায়গা ফিরে পাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ ও সাধুবাদ জানিয়েছে। এদিকে চেয়ারম্যানের নিকট উপস্থিত লোকজনের সামনে ব্যবসায়ী অরবিন্দু মন্ডল, আনারুল ইসলাম ও ময়নুদ্দীন জানায়, তারা এই ৩ জনে মিলে বাজার কমিটির নেতা রশিদ, ছালাম ও ফারুকের কাছে সর্বমোট ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে বসানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আ: ছালাম জানান, টাকা লেন-দেন হয়েছে জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে এটা ঠিক, কিন্তু সেটি তৎকালীন নায়েব নিয়েছে, আমরা শুধু মাধ্যম ছিলাম। ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এস এম শহিদুল ইসলাম জানান, টাকা লেন-দেনের ব্যাপারে তারা নিজেরা পরিষদে এসে স্বীকারোক্তিসহ লিখিত দিয়েছে। জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মীমাংসা হয়ে গেছে। টাকা লেন-দেন নিয়ে পরে নিষ্পত্তি করা হবে। এদিকে উচ্ছেদকৃত ৩ ব্যবসায়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে জায়গা ফিরে পেয়ে আনন্দ ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। তারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজরুল ইসলামের সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট