নিজস্ব প্রতিনিধি: আজাহারুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়িকে বাড়ি থেকে তুলে এনে দুইদিন ধরে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে রেখে নির্যাতন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পাঁচ ভরি সোনার গহনা ও নগদ ৩২ লাখ টাকাসহ ১৬টি চেক এর পাতায় সাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার সাতক্ষীরার ভোমরা গ্রামের ব্যবসায়ি “মামা ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজের” স্বত্বাধিকারী আজাহারুল ইসলাম বাদি হয়ে তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খান এবং সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠুসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
ভারপ্রাপ্ত বিচারক নয়ন বিশ্বাস মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ভোমরা বন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক মামা ভাগ্নে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী। আসামী নাসিম ফারুক খান মিঠুর সঙ্গে তৎকালিন পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ও গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত্ াবাবলুর রহমান খানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে অনুযায়ি ভোমরা বন্দরের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকসহ ব্যবসায়িদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিতো নাসিম ফারুক খান মিঠু। ওইসব ব্যবসায়িদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করাতেন মিঠু। তা থেকে একটি অংশ টাকা কাজী মনিরুজ্জামান তাকে দিতো। একপর্যায়ে বাদির সঙ্গে ভারতীয় ব্যবসায়িদের কোটি কোটি টাকার ব্যবসার বিষয়টি জানতে পেরে নাসিম ফারুক খাঁন মিঠু ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ দুপুরে তার চেম্বার অব কমার্সের অফিসে ডেকে ১০ কোটি টাকা দাবি করে। জমি ও বাড়ির সবকিছু বেঁচেও ওই টাকা হবে না বলায় গোয়েন্দা পুলিশকে দিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয়। পরে বাদি বাড়ি চলে আসেন।
২৭ মার্চ রাত ১০টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাবলুর রহমান খানের নেতৃত্বে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে তুলে আনে। এরপর দুইদিন গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রেখে তাক নির্যাতন করা হয়। ২৯ মার্চ রাতে কাজী মনিরুজ্জামান, বাবলুর রহমান খান ও নাসিম ফারুক খাঁন মিঠু তাকে চোঁখ বেঁধে ভোমরা অফিসে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে থাকা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংকের দুটি বই এর ১৩০টি পাতা নিয়ে নেয় তারা। পরে বলে যে, আজ তোর জীবনের শেষ দিন, কলেমা পড়ে নে। পরে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় গাড়িতে তুলে মারতে মারতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাড়ি থেকে নগদ ৩২ লাখ টাকা ও পাঁচ ভরি সোনার গহনা নিয়ে নেয় তারা। একপর্যায়ে সেখান থেকে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ২৯ মার্চ দিবাগত রাত দুটোর দিকে ১৬টি চেকের পাতায় সাক্ষর করিয়ে নেয়। বাকী টাকা না দিলে অন্য লোককে দিয়ে চেক ডিজঅনারের মামলা করানোর হুমকি দিয়ে ৩০ মার্চ সকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে নাসিম ফারুক খাঁন মিঠু বলে যে, টাকা পেলে বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আজাহারুলের বিরুদ্ধে ১৬ টি চেক ডিজঅনারের মামলা করা হবে।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাহানা ইমরোজ মামলার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।#