জিংক বা দস্তা আমাদের শরীরের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। সুস্থ শরীরে অতি সূক্ষ্ম পরিমাণে জিংক বিদ্যমান থাকে। এর উপস্থিতি ও গ্রহণের ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরের এক লাখ বা সমপরিমাণ আমিষের মধ্যে তিন হাজার আমিষই জিংক ধারণ করে এবং তিনশোর বেশি এনজাইমের সঠিক পরিচালনার জন্য জিংকের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। রক্তের লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকা, চোখের রেটিনা, হাড়, ত্বক, কিডনি, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, লালা গ্রন্থি ও প্রোস্টেট গ্রন্থিতে জিংক সঞ্চিত থাকে।
জিংকের অভাবে ডায়রিয়া বা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও কনজাংকটিভার প্রদাহ, পায়ে বা জিহ্বায় ক্ষত, একজিমা, ব্রণ বা সোরিয়াসিস-জাতীয় ত্বকের প্রদাহ, ছত্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত অসুস্থতা এবং শরীরের ক্ষত শুকাতে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। রোগ-প্রতিরোধক তন্ত্রকে উজ্জীবিত করে তুলে জিংক এ ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে, জটিল জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরের কোষকলাকে ফ্রি-রেডিকেলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে এবং ক্ষতের সুস্থতা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রাম করে ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত (ছয় মাসের চেয়ে কমবয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ১০ মিলিগ্রাম) সম্পূরক জিংক গ্রহণের সুপারিশ করে। গরু ও ভেড়ার মাংসে উচ্চমাত্রায় জিংক রয়েছে। দুগ্ধজাত খাদ্য, শিমজাতীয় উদ্ভিদ, মসুরের ডাল, চিনাবাদাম, মাশরুম, সয়াবিন, ঝিনুক এবং এ থেকে তৈরি মাখনেও জিংক রয়েছে। এখন অবশ্য জিংকের সম্পূরক হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধও রয়েছে। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য রক্ষায় জিংকের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে এখনো তেমন সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। তাই এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এবার আসুন জেনে নেয়া যাক আমাদের শরীরে জিংকের উপকারিতা সম্পর্কে-
১. লালা গ্রন্থির জিংক নির্ভর পলিপেটাইড, গাসটিন এর মাধ্যমেই স্বাদের অনুভূতি পাওয়া যায়। কাজেই যদি জিংক এর অভাব থাকে তবে স্বাদ বোঝার ক্ষমতা কমে যায় অর্থাৎ রুচি কমে যায়। তাই জিংক রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
২. কিছু হরমোন যেমন: গ্লুকাগন, ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন এবং সেক্স হরমোন এর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. জিংক এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা পোল্ট্রীর দৈহিক বৃদ্ধি, হাঁড়ের বৃদ্ধি, পালক বিন্যাস, এনজাইমের গঠন ও তার কাজ এবং রুচি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. কেরাটিন তৈরি ও তার পরিপক্কতা, ক্ষত সারানো, আবরনি কোষের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজের দ্বারা জিংক ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে।