ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাইলেই এখন থেকে কারও বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করতে পারবেন না। এই ধারায় মামলা করার আগে দলীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যেই দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারাদেশের দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে এই নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন দু’টি সাংগঠনিক জেলার নেতা জানিয়েছেন, তারা ঢাকা থেকে ওবায়দু কাদেরের টেলিফোন বার্তা পেয়েছেন। ওই বার্তায় দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘৫৭ ধারায় মামলা করার আগে কেন্দ্র থেকে আলোচনা করে অনুমতি নিতে হবে।’
দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, ‘সম্প্রতি ৫৭ ধারায় দায়ের করা কয়েকটি মামলা নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক ওঠার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন জেলায় এ নির্দেশনা দেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘৫৭ ধারায় মামলার অপপ্রয়োগ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের যে কেউ এই মামলা করার আগে আমাদের জানালে আমরা যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে অনুমতি সাপেক্ষে এ মামলা করা যাবে। সাধারণ সম্পাদক সারাদেশে এ বার্তা পাঠিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ‘তৃণমূল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পেলেই ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করার আগে অনুমতি দেওয়া হবে। কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কোনও নেতা ৫৭ ধারায় মামলা করলে ওই নেতার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই প্রসঙ্গে সম্পাদকমণ্ডলীর একজন নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাদের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলা নিয়ে দেশব্যাপী নেতিবাচক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দলের হাইকমান্ডের কাছ থেকে আমি মৌখিক নির্দেশ পেয়েছি।’
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘দলীয় সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন জেলায় ফোন করে এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।’
সম্প্রতি বরিশালের আগৈলঝাড়ার উপজেলা পরিষদ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করা হয়। ওই ছবিতে বঙ্গবন্ধুকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। এই মামলায় প্রথমে তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুর করেন আদালত। পরবর্তী সময়ে ওই দিনই আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এ ঘটনার পর ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আওয়ামী লীগ। ঘটনার জন্য দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বরিশাল ও বরগুনার জেলা প্রশাসক ও আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
এই আইনের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তুচ্ছ কারণে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। এই প্রবণতা আত্মঘাতী। এই সব আত্মঘাতী কাজ আমাদের বন্ধ করতে হবে।’
এরপরই ৫৭ ধারায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশ সদর দফতর থেকে। পাশাপাশি এই ধারায় মামলা গ্রহণের আগে পুলিশ সদর দফতরের আইন শাখার পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলা হয়।