যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অশোক বোসসহ দুই জনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহত অপরজন হলেন যুবলীগ নেতা সেলিম রেজা মিঠু। তারা এখন যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
আহতদের অভিযোগ, মাসব্যাপী শোক কর্মসূচি পণ্ড করতেই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের আশ্রিত সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাতেই যুবলীগের উদ্যোগে শহরে মিছিল বের করা হলে শহরের মণিহার এলাকায় বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে শনিবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে শহরের বিজয়স্তম্ভ মোড় থেকে যুবলীগের দুই কর্মীর ওপর হামলার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের যৌথ উদ্যোগে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলা যুবলীগ, শহর যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের উদ্যোগে যশোরের মণিহার চত্বর এলাকায় জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ১৬ আগস্ট একটি বড় সমাবেশ করে তারা। সেখানে যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ প্রধান অতিথি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন প্রধান বক্তা ছিলেন। এই সমাবেশে অনেক জনসমাগম হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সমর্থকরা ক্ষিপ্ত হন।
নেতারা জানান, ১৯ আগস্ট মণিহারের সামনে সদর যুবলীগের শোকদিবসের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচি বানচাল করতে ছাত্রলীগ সদর উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম শুক্রবার বিকেলে সেখানে একটি খাট রেখে জায়গা দখলের অপচেষ্টা চালান এবং জানান, এখানে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান হবে এবং সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শাহীন চাকলাদার। এ ঘটনায় সেখানে উপস্থিত যুবলীগের কয়েক নেতা-কর্মী তাকে জানান, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে। সে কারণে এখানে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান করা ঠিক হবে না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হলে রবিউল তাদের দেখে নেবেন বলে শাসিয়ে যান।
জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুদ্দিন মিঠু বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুবলীগ সদর উপজেলার আহ্বায়ক অশোক বোস, যুবলীগ নেতা সেলিম রেজা মিঠুসহ দু’তিনজন মণিহারের পাশে বসেছিলেন। ওইসময় অতর্কিতে সন্ত্রাসীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর্যুপরি কুপিয়ে এবং ইট দিয়ে থেঁতলে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অশোক বোস বলেন, রাতে শাহীন চাকলাদারের মদদপুষ্ট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন বিপুল, বর্তমান জেলা সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, সেক্রেটারি ছালছাবিল আহমেদ জিসান, যুবলীগের জাহিদ হোসেন ওরফে টাক মিলন, হাজী সুমনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একদল দুর্বৃত্ত তাদের ওপর হামলা চালায়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডাক্তার আব্দুর রহিম মোড়ল বলেন, শনিবার (১৯ আগস্ট) আহতদের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। সেখানে গুরুতর কিছু নেই। তবে, আহত দুজনকে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। তারা আশঙ্কামুক্ত।
যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ছাত্রলীগ সদর উপজেলা কমিটির উদ্যোগে শনিবার শোকদিবসের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু প্রতিপক্ষরা তাদের মঞ্চ তৈরিতে বাধা দেয়। ওইসময় সেখানে থাকা দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ তাদের ধাওয়া ও মারপিট করে। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।
জানতে চাইলে যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ বলেন, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বানচাল করতেই পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা শনিবার দুপুরে বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার কারণে শুক্রবার রাতের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় জড়িত কাউকে পুলিশ এখনও আটক করতে পারেনি। ঘটনার ব্যাপারে কেউই এখনও থানায় অভিযোগও দেয়নি। ঘটনাস্থল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আজমল হুদা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উভয় পক্ষের সমাবেশ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন জানান, অশোক সদর উপজেলার নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক। পলাশও একই সংগঠনের নেতা। তিনি তাদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের আটক এবং শাস্তি দাবি করেন।