ঝিনাইদহের শৈলকুপায় শিক্ষকের স্কেলের আঘাতে চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছে মারিয়াতুছ ফোয়ারা নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী। গত ১৮ আগস্ট ওই ঘটনা ঘটে। ফোয়ারা বর্তমানে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
এরই মধ্যে ফোয়ারার বাম চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ফোয়ারার বাবা শরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা বলছেন ফোয়ারার বাম চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে নিতে হবে।
ফোয়ারা শৈলকুপার দ্বীগনগর মনতেজার রহমান মিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। গত ১৮ আগস্ট ক্লাস চলার সময় শিক্ষক মুরাদ হোসেনের স্কেলের আঘাতে চোখে আঘাত পায় ফোয়ারা। ফোয়ারা দোহকোলার গ্রামের বাসিন্দা।
গতকাল মঙ্গলবার ফোয়ারার বাবা শরিফুল ইসলাম শিক্ষক মুরাদ হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন। বুধবার মুরাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, গত ১৮ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মুরাদ হোসেন ষষ্ঠ শ্রেনীতে ইংরেজি বিষয়ে ক্লাস নেওয়ার সময় ওই ছাত্রীকে স্টিলের স্কেল দিয়ে আঘাত করেন। স্কেলের আঘাত ফোয়ারার বাম চোখে লাগে। তিনি আরো জানান, ওই দিনই ঝিনাইদহ জেলা শহরের গোরস্তানের সামনে দীপশিক্ষা অর্ণিবান চক্ষু ক্লিনিকে নেওয়া হয় তাকে। পরের দিন ওই ছাত্রীকে ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ওসি আলমগীর আরো বলেন, ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষক মুরাদ হোসেনের হাতে কালি লেগে যায়। এতে মুরাদ ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীদের ওপর চড়াও হন এবং মারধর করতে থাকেন। এ সময় আহত হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী ।
ওসি আরো জানান, বুধবার সকালে মুরাদ হোসেনকে ঝিনাইদহ মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত মুরাদকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনার দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করেছন শৈলকুপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আক্কাচ আলী ।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন আহম্মদ সেলিম জানান, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সাতদিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক । তিনি বলেন, ‘মুরাদ হোসেন স্কুলের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক । ২০১২ সালে তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়। তিনি ইংরেজি ভালো পারেন, সে কারণে তাকে দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে ইংরেজি পড়ানো হয়। ঘটনার পর পরই কারণ দর্শানোর জন্য নোটিস করা হয়েছে বলেও জানান প্রধান শিক্ষক।
হুমায়নু আহম্মদ সেলিম জানান, ওই ছাত্রীর বাবা হতদরিদ্র । তাঁর দুই মেয়ে । তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আহত ছাত্রীকে চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
এদিকে, ফোয়ারার বাবা শরিফুল ইসলাম জানান, তাঁর মেয়ের বাম চোখে অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে। অন্য চোখ ভালো রাখতে ভারতে নিতে হবে । টাকা লাগবে ১৫ লাখ। কিন্ত সেই টাকা জোগাড় করার মতো সাধ্য নেই তাঁর । ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকের বিচার ও শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।