ডেস্ক রির্পোট : ‘আমার মুক্তামনি অনেক ডাক্তারের কাছে গ্যাছে। অনেক ডাক্তার তারে দ্যাখছে। সে বলে বাবা আমিও ডাক্তার হমু।’ বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামনির বেঁচে থাকার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁর বাবা ইব্রাহীম হোসেন। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় এখন পর্যন্ত অনেকটাই সুস্থ মুক্তামনি। আর এ নিয়ে ইব্রাহীমের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলে স্কুলে পাঠাবেন আবার? -এ প্রশ্ন করাতে ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘পাঠাব মানে? আমার মেয়ে মুক্তামনি অনেক পড়বে। সে বলছে, সে ডাক্তার হবে।’ ১২ বছর বয়সি মুক্তামনির বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে। দেড় বছর বয়সে তার ডান হাতে একটি টিউমারের মতো হয়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ডান হাতে। হাতটি ফুলে যায়। একপর্যায়ে দুর্গন্ধও বের হতে থাকে।
গত ১১ জুলাই মুক্তামনিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুক্তামনির জন্য গঠিত আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড জানায়, মুক্তামনি বিরল রোগে আক্রান্ত। রোগটির নাম ‘হাইপারকেরাটোসিস’। গত মাসে সাতক্ষীরা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তামনিকে সরকারি উদ্যোগে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বহনের কথা জানান। ইব্রাহীম এলাকায় একটি দোকান চালান। ওই দোকানেই চলে সংসার। মুক্তামনির একজন যমজ বোন আছে। ওর নাম হীরামনি। ওদের ছোট এক ভাইও আছে। এক বছর তিন মাস বয়সি ওই ভাইয়ের নাম আল আমিন। ইব্রাহীম জানান, জন্মের দেড় বছর বয়সে ওই সমস্যাটা ধরা পড়ে। ডান হাতটা ধরলে ব্যথা পেত মুক্তামনি। এর পর স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখানো হয়। তাঁর পরামর্শে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন বলা হয়, হাড়ে সংক্রমণ হয়েছে। এ সময় একাধিক চিকিৎসক দেখানো হলেও কোনো সুফল পাচ্ছিলেন না ইব্রাহীম। গত দুই বছর আগে সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড এ (সিআরপি) নিয়ে যাওয়া হয় মুক্তামনিকে। আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ইব্রাহীম। মুক্তামনির কাগজপত্র সিঙ্গাপুরে পাঠান বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন। ওই দেশের একটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথাও হয়। তবে সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতাল মুক্তামনির অস্ত্রোপচার করায়নি, ওদের ভাষায়, তা সম্ভব না।
ওই চ্যালেঞ্জই নিয়েছে বার্ন ইউনিট। সামন্তলাল সেন জানান, চিকিৎসকদের ২৯ জনের একটি দল অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়। এখন সুস্থ আছে মুক্তামনি।
ইব্রাহীম জানান, স্থানীয় মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে মুক্তামনি। ইব্রাহীম বলেন, ‘ডান হাতটা ঢেকেই স্কুলে যেত মুক্তামনি। কিন্তু একবার এক শিক্ষক ওর ডান হাতে ধরে চাপ দেন। এতে প্রচ- ব্যথা পায় মুক্তামনি। এরপর থেকে ওর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই।
মুক্তামনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে -এ আশ্বাস দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কী করবেন তখন? ইব্রাহীম বলেন, ‘মেয়েটা আমার বড় দুঃখী, কোনো সাধ আহ্লাদ করতে পারেনি। ওকে নিয়ে ঘুরব, ও যে যে জায়গায় যেতে চায় সেখানে নিয়ে যাব।’