খুলনায় চাঞ্চল্যকর শিশু হাসমি মিয়া (৯) হত্যা মামলায় শিশুটির মাসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার বেলা ১১টার দিকে খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোসাম্মাৎ দিলরুবা সুলতানা এ রায় দেন
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শিশু হাসমির মা সোনিয়া আক্তার, মো. নুরুন্নবী, মো. রসুল এবং মো. হাফিজুর রহমান। এই মামলার অপর আসামি রাব্বি সরদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
মায়ের সঙ্গে অন্যকে অনৈতিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় দেখে ফেলায় আড়ংঘাটা থানা এলাকার সরদারডাঙ্গা শহিদ হাতেম আহম্মেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র হাসমি মিয়াকে (৯) খুন করা হয়। মা সোনিয়া বেগমের সামনেই শিশুটিকে নৃশংসভাবে খুন করে তিন ঘাতক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৬ সালে মানিকতলার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খানের মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে মো. হাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। এর ৬ মাস পর হাফিজুর রহমান বিদেশে চলে যান। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সোনিয়ার চলাফেরা উচ্ছৃঙ্খল হতে থাকে। তিনি একাধিক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। দেশে আসার পর বিষয়টি জানতে পারেন স্বামী হাফিজুর রহমান। এরপর তিনি স্ত্রীকে শোধরানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তালাক দেন স্ত্রীকে। হাসমি থেকে যায় বাবা সঙ্গে। হাসমিকে তার বাবার কাছ থেকে অপহরণ করে আনার জন্য নুরুন্নবী ও রসুলের সাথে ৫০০ টাকা ও অনৈতিক কাজের চুক্তি হয় সোনিয়ার।
২০১৬ সালের ৬ জুন রাত পৌনে ৯টার দিকে শিশু হাসমিকে অপহরণ নিয়ে করে তার মায়ের কাছে নিয়ে আসা হয়। এরপর চুক্তি অনুযায়ী সরদার ডাঙ্গা বাগানের (বাঁশ ঝাড়) মধ্যে পালাক্রমে অপহরণকারীরা সোনিয়ার সঙ্গে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। এ সময় শিশু হাসমি ঘটনা দেখে তার মাকে বলে ‘মা’ তুমি কি করতেছো আমি বাবাকে বলে দেব। এ ঘটনা বাইরে ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে পাষন্ডরা মা সোনিয়ার সামনেই শিশু হাসমিকে মুখ চেপে ধরে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর মরদেহ গুমের জন্য ওই রাতেই সিমেন্টের বস্তায় ভরে খুলনা বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সরদার ডাঙ্গা বিলের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। এরপর ৯ জুন সকালে খুলনা বাইপাস সড়ক সংলগ্ন সরদারডাঙ্গা বিলের মধ্যে থেকে সিমেন্টের বস্তাবন্দি অবস্থায় হাসমির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় সেদিনই হাসমির বাবা মো. হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মো. নুরুন্নবী, হাফিজুর রহমান, মো. রসুলের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে অপহরণের পর হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আড়ংঘাটা থানা পুলিশের এসআই মো. মিজানুর রহমান একই বছরের ৩০ জুন এজাহারভুক্ত হাফিজুর রহমান ও আসাদ ফকিরকে বাদ দিয়ে সোনিয়া আক্তার, মো. নুরুন্নবী ও মো. রসুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদীর নারাজি আবেদনের পর পুনরায় তদন্ত শেষে সিআইডির পরিদর্শক মিঠু রানী দাসি একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট গৃহীত হওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। ২ এপ্রিল অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার চার্জশিটভুক্ত দুইজন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠন হওয়া পাঁচজন আসামি হলেন- সোনিয়া আক্তার, মো. নুরুন্নবী, মো. রসুল, মো. হাফিজুর রহমান, ও রাব্বি সরদার। এছাড়া অব্যাহতি পাওয়া দুজন হলেন মো. জসিম খান ও মো. আসাদ ফকির।