বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে থমকে গেছে দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতেই চলছে দলটি।
দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে ধীরগতিতে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে বেগম জিয়া লন্ডন যাওয়ার পর নতুন করে কোনো জেলায় কমিটি দিতে পারেনি দলটি। একইভাবে সদস্য সংগ্রহ বৃদ্ধি ও নবায়ন কার্যক্রমেও গতি নেই। নেতাদের বড় একটি অংশই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ এলাকা ঘিরে সবারই তৎপরতা বাড়ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন ১৫ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরতে পারেন। লন্ডনে চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিচ্ছেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সন্ধ্যায় জানান, ‘সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেমে আছে কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এখন দেশে বন্যা চলছে। নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের নজর সেদিকেই। সদস্য সংগ্রহ অভিযানও চলছে। এটা আমরা আরও এক মাস বৃদ্ধি করেছি। সেপ্টেম্বরজুড়েই এ অভিযান চলবে। এ পর্যন্ত ৫০ লাখেরও বেশি সদস্য ফরম কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ’ বিএনপি-প্রধানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা শেষে যথা শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন। ১৫ সেপ্টেম্বর সেই সম্ভাবনা রয়েছে। ’ তবে দলের একটি সূত্র এও বলেছে, চিকিৎসার কারণে আরও কিছু সময় লন্ডনে থাকতে পারেন বিএনপি-প্রধান। সে ক্ষেত্রে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এদিকে জিয়া অরফানেজ চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। এ যাত্রাও তিনি আদালতে হাজির নাও হতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, চিকিৎসার কারণে তিনি (খালেদা জিয়া) দেশে না ফিরলে আবেদন করার সুযোগ আছে। লন্ডন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেগম খালেদা জিয়ার ডান চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বাসার কাছাকাছি একটি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যান্ডেজ খোলা হয়। চোখের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে। এখন পায়ের চিকিৎসা চলবে। এ ছাড়া শারীরিক চেকআপও করাবেন বিএনপি-প্রধান। ১০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্তভাবে দুই চোখের চিকিৎসা সম্পন্ন হবে। চিকিৎসকদের সবুজ সংকেত পেলেই তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরতে পারেন। নইলে সেপ্টেম্বর মাস পুরোটাই লন্ডনে থাকতে পারেন তিনি। ঈদের পর সেখানে নেতা-কর্মীসহ প্রবাসীদের সঙ্গে বিএনপি-প্রধানের একটি মতবিনিময় সভারও আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সার্বিক বিষয় তারেক রহমান নিজেই তদারকি করছেন। তবে এ ব্যাপারে অনেকটা গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, গত আড়াই বছরে ৪৯টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠন হয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই আংশিক। কয়েকটি জেলা চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। আরও অন্তত ৩২টি জেলা এখনো পুনর্গঠনের বাকি রয়েছে। এর মধ্যে ১০টির কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই এসব কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) চলে যাওয়ার পর কিছুটা ধীরগতিতে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলছে। তবে কমিটি নিয়ে কাজ চলছে। ম্যাডাম দেশে ফিরলেই অন্তত ১০টি কমিটি দেওয়া সম্ভব হবে। ’
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, বেগম জিয়া দেশে ফিরলেই সহায়ক সরকারের রূপরেখাও দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা এর একটি খসড়াও তৈরি করে রেখেছেন। বেগম জিয়া দেশে ফিরলেই তাকে দেখানো হবে। পরে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে এ রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, সদস্য সংগ্রহ অভিযানেও কিছুটা গতি কমে এসেছে। এ পর্যন্ত ৫০ লাখ সদস্য সংগ্রহ ফরম কেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী এ তথ্য জানান। সর্বশেষ গতকাল দফতর শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫০ লাখের কিছু বেশি ফরম বিক্রি হয়েছে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোয় এ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া ঈদুল আজহা নিয়ে সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ কারণে গতি কিছুটা কমে এসেছে বলে দাবি দফতর শাখার কর্মকর্তাদের। বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, দেশের অধিকাংশ এলাকা এখন বন্যাকবলিত। তাই বিএনপি এখনো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোকে। এজন্য সিনিয়র নেতাদের নেতৃত্বে টিম করে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এ ছাড়া ঈদুল আজহাও সমাগত। নেতাদের নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায়ও যেতে হচ্ছে। কর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়েই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে আপাতত গতি কিছুটা কমে এসেছে। ঈদের পরপরই আবারও সদস্য সংগ্রহ অভিযান পুরোদমে চালু হবে। একইভাবে শুরু হবে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও। ১৫ জুলাই চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান বিএনপি চেয়ারপারসন। লন্ডন পৌঁছার পর থেকে বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।