ডেস্ক রিপোর্ট: দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারো ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। সর্বশেষ ২০১০ সালে ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। তিন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুই দলই চাইবে জয় দিয়ে শুরু করতে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেটি শুরু দুপুর আড়াইটায়। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। তিনটি সিরিজই ছিল তিন ম্যাচের। তিনটিতেই হেরেছে টাইগাররা।
২০১০ সালে সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলো বাংলাদেশ। ঐ সিরিজের অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারলেও, দ্বিতীয় ম্যাচেই নাটকীয়ভাবে ৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। তবে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ হেরে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। তবে ঐ সিরিজ থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেয়ার কোন সুযোগ এখন বাংলাদেশের নেই। কারণ, দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। সেই সাথে বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশ।
সেই প্রমাণ ইতোমধ্যে ক্রিকেট বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের নভেম্বর থেকে দেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৬টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সবগুলোই জিতেছে মাশরাফিবাহিনী। জিম্বাবুয়েকে পাঁচ ও তিন ম্যাচের সিরিজে এবং পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানকে তিন ম্যাচের সিরিজে হারের লজ্জা দেয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় চুবানিও খাইয়েছে বাংলার টাইগাররা।
তাই এসব স্মৃতিই এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গর্জে উঠতে বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশের জন্য। উপরন্তু দেশের মাটিতে খেলা। তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে এক কথায় ফেভারিট বাংলাদেশ। কাগজে কলমেই শুধু নয়, বাংলার টাইগারদের মনেও এই বীজ রোপন হয়ে গেছে।
দলের মারকুটে ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান গতকাল তো তেমনটাই বলছিলেন, ‘যেহেতু আমাদের মাটিতে খেলা তাই বাড়তি সুবিধা আমরা পাব। ইংল্যান্ড যদি তিনশ’র উপরে রান করে তাহলে আমরাও তা টপকে যেতে পারবো। এই সামর্থ আমাদের ব্যাটসম্যানদের আছে। আমরা টানা ৬টি সিরিজ জিতেছি। পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও আমরা হারিয়েছি।’
শুধু কি দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোই প্রেরণা? না। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেয়ার আরও দু’টি বড় রসদ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। আর তাহলো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মঞ্চ। ২০১১ ও ২০১৫ সর্বশেষ দু’টি বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডকে বধ করেছে বাংলাদেশ।
২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও বোলার শফিউল ইসলামের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ইংল্যান্ডকে ২ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ২০১৫ বিশ্বকাপে এডিলেডে মাহমুদুল্লাহ’র ব্যাটিং ও পেসার রুবেল হোসেনের আগুন ঝড়ানো বোলিং-এ ইংলিশদের ১৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ।
তাই সেখান থেকেও আত্মবিশ্বাস নিচ্ছেন সাব্বির, ‘বিশ্বকাপের মত বড় আসরে ইংল্যান্ডকে আমরা হারিয়েছে। এই সিরিজে এগুলো আমাদের বাড়তি প্রেরণা দেবে।’
বলা যায় আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়েই ইংলিশদের বিপক্ষে মাঠে নামছে টাইগাররা।
তবে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে ইংল্যান্ডও। দেশের মাটিতে সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানকে হারিয়েছে ইংলিশরা। লংকাকে ৩-০ ও পাকিস্তানকে ৪-১ ব্যবধানে হারায় ইয়োইন মরগানের দল। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে ইংল্যান্ড দলে অধিনায়কত্ব করছেন জশ বাটলার। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মরগান না আসায় টাইগারদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাটলার।
তবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে কতটা নিরাপত্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, তার প্রমান মিলেছে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান মঈন আলীর কন্ঠে, ‘এখানকার নিরাপত্তা অসাধারন। এখন পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়েছি আমরা। আমি ঠিক জানি না এর চেয়ে বেশি নিরাপত্তা অন্য কোন দেশ দিতে পারবে কিনা?’
বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়ে যেহেতু নিশ্চিন্ত ইংল্যান্ড, তাই ২২ গজে নিজেদের সেরাটা দিয়ে মুখিয়েই থাকবে তারা। যেমনটা গেল সিরিজগুলোতে দিয়েছে ইংলিশরা। নটিংহ্যামে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে দলীয় সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ৩ উইকেটে ৪৪৪ রানের সংগ্রহ দাড় করায় তারা। আগের রেকর্ডটি ছিলো শ্রীলংকার। ২০০৬ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ উইকেটে ৪৪৩ রান করেছিলো লংকান ব্যাটসম্যানরা।
এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একাদশের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচও খেলেছে ইংল্যান্ড। ইমরুল কায়েসের ৯১ বলে ১২১ রানের উপর ভর করে ৩০৯ রানের সংগ্রহ পায় বিসিবি। এরপর ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলার ও মঈনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ম্যাচটি ৪ উইকেটে জিতে নেয় ইংলিশরা। তাই বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড।
তবে ইংল্যান্ডের সব আত্মবিশ্বাস দুমড়ে-মুচড়ে যাবে, যদি অতীতের মত বাংলাদেশ তাদের সেরাটা দিতে পারে ২২ গজে। তাই দেশের মাটিতে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের পথে আরও একবার গর্জে উঠুক মাশরাফির বাংলাদেশ, এমনটাই প্রত্যাশা ১৬ কোটি মানুষের।
বাংলাদেশ স্কোয়াড : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান (সহ-অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সাব্বির রহমান, শফিউল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন রুবেল, আল আমিন হোসেন ও তাসকিন আহমেদ।
ইংল্যান্ড স্কোয়াড : জশ বাটলার (অধিনায়ক), মঈন আলী, জনি বেয়ারস্টো (উইকেটরক্ষক), জেক বল, স্যাম বিলিংস, লিয়াম ডসন, বেন ডাকেট, স্টিভেন ফিন, লিয়াম প্লানকেট, আদিল রশিদ, জেসন রয়, বেন স্টোকস, জেমস ভিন্স, ডেভিড উইলি ও ক্রিস ওকস।
পূর্ববর্তী পোস্ট