ডেস্ক রিপোর্ট: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, সীমান্ত হত্যার প্রধান কারণ গরু চোরাচালান। আর ভারত ও তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সহযোগিতা ছাড়া এই হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব নয়।
সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের সীমান্ত বৈঠক শেষে শুক্রবার রাজধানীর পিলখানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিবি মহাপরিচালক। আজিজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অনুরোধে সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করতে কাজ করছে ভারত সরকার। এ ছাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত আছে চার হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার, যার বেশির ভাগ এলাকাই কাঁটাতারের বেড়ায় বেষ্টিত। সীমান্তের দুই পাশেই ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সীমান্ত বাহিনী ২৪ ঘণ্টাই পাহারা দেয়। তারপরও সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এসব অনুপ্রবেশকারীর অন্যতম লক্ষ্য থাকে গরু চোরাচালান। গরু চোরাচালানকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। প্রতিটি মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয় আলোচনার এক নম্বর এজেন্ডা থাকে। এ বছরও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, ভারতের সহযোগিতা ছাড়া সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে না।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক প্রসঙ্গে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘যেটা আমাদের জয়েন্ট ডিক্লারেশনেও (যৌথ ঘোষণা) আছে, যে তোমার লোকজন তো নন লেথাল উইপেন (অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র) ইউজ করে সেটা তোও মানুষ মারা যাওয়ার কথা না। আমার লোকজন তো লেথাল উইপেন (প্রাণঘাতী অস্ত্র) ইউজ করে এবং আমার লোকজনও আক্রান্ত হয়। কই, আমরা তো মানুষ মারি না। আমরা যদি ফায়ার রিজোর্ট করতে হয়, হিপ লেভেলের নিচে ফায়ার করি। তোমার লোকজন কেন চেস্টে ও মাথায় গুলি করে?’
বিজিবি মহাপরিচালক জানান, আলোচনা শেষে তাঁরা বলেন, গরু চোরাচালান বন্ধ করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে ভারতের সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। ভারত তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারলে সীমান্ত হত্যা অনেক কমে আসবে এবং অনেক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এবারের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকটিকে সফল উল্লেখ করে মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, মানবিক কারণে সীমান্ত রেখার ১৫০ গজের বাইরেও কিছু কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে বিজিবি।
আজিজ আহমেদ বলেন, ‘এটা হলো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আমাদের লোকজন ওই শূন্য রেখা থেকে শুরু করে দেড়শ গজের মধ্যে যায় শুধু চাষাবাদের জন্য, অন্য কিছু না। ওরাও আসে চাষাবাদ করে, অন্য কিছু না। তখন তারা বলেছিল, আমরা যদি গ্রামগুলোকে নিয়ে আসি, ওই খানে আমরা যদি কোনো গেট না রাখি, কৃষকগুলো তাদের জমিতে কীভাবে যাবে? আপনারা যদি অনুমোদন দেন আমরা ওখানে গেট করতে চাই সিঙ্গেল ইয়ার ফেন্সিংয়ের সঙ্গে। তখন আমি তাঁদের বলেছিলাম, আপনারা যেখানে গেট দিতে চান সেখানে ডাবল লেয়ার ফেন্সিং দিতে হবে।’
বিজিবি মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশের অনুরোধে সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানা বন্ধসহ ভারতে পালিয়ে থাকা প্রায় এক হাজার ২০০ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা বিএসএফের কাছে দিয়েছে বিজিবি।
পূর্ববর্তী পোস্ট