দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের ভয়ংকর রকমের যৌনাসক্তি রয়েছে। তাঁর এই সমস্যার চিকিৎসা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত শনিবার রোহতকের কারাগারে রাম রহিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন একদল চিকিৎসক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই চিকিৎসক দল এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে থাকা রাম রহিম চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, কারাগারে শারীরিকভাবে তিনি খুব অস্বস্তি ও অস্থিরতায় ভুগছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিকিৎসক দলের একজন বলেন, ‘রাম রহিম একজন যৌন উন্মাদ ব্যক্তি। কারাগারে শারীরিক সংসর্গ করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তিনি অস্থির। যদি এখনই তাঁর চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে তাঁর বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাম রহিম মাদকাসক্ত কি না, এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বেশ কিছু প্রতিবেদনে জানা গেছে, ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি মদ্যপান করতেন।
রাম রহিমের ডেরার সাবেক সদস্য গুরুদাস সিং তুর দাবি করেন, ‘রাম রহিম এখন মদ্যপান করেন না। তবে তিনি নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক ও যৌন উত্তেজক পানীয় খেতেন; যা অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য দেশ থেকে নিয়ে আসা হতো।’
রায় ঘোষণার সময় আদালতে গুরমিত রাম রহিম নিজেকে নপুংসক বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘১৯৯০ সাল থেকে আমি শারীরিকভাবে অক্ষম, নপুংসক। আমার পক্ষে কাউকে ধর্ষণ করা সম্ভব নয়।’
এ প্রসঙ্গে সিবিআইকে দেওয়া জবানবন্দিতে গুরুদাস সিং তুর বলেন, ‘তিনি মিথ্যাবাদী, তিনি নপুংসক নন। ১৯৯০ সালে তিনি যখন ডেরার প্রধান হন, তখন তাঁর ছেলের বয়স কয়েক মাস। মানুষ যখন তাঁর পুরুষত্ব পরীক্ষা দাবি জানিয়েছিলেন, তখন তিনি কথা ঘুরিয়ে বলেছিলেন যে শুধু স্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আদালতকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করেছিলেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে যাওয়ার সময় পালিত কন্যা হানিপ্রীতের সঙ্গে জেলে রাত্রিবাস করার আবেদন করেছিলেন রাম রহিম। তিনি দাবি করেছিলেন, হানি তাঁর ফিজিওথেরাপিস্ট। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। পরে কারাগারে যাঁদের সঙ্গে রাম রহিম নিয়মিত দেখা করতে চান, এমন ১০ জনের তালিকায় স্ত্রী হরজিৎ কৌরের বদলে হানিপ্রীতের নাম দিয়েছিলেন তিনি।
রাম রহিম কারাগারে যাওয়ার পর থেকে হরিয়ানায় সিরসার ডেরায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেখানে অভিযানের শুরুর দিকে বিপুল পরিমাণ কনডম ও জন্মনিরোধক ওষুধ জব্দ করা হয়। ডেরার ভেতরে সাধ্বী হোস্টেলে রাম রহিমের সরাসরি যাতায়াত ছিল। ওই যাতায়াতের জন্যই দুটি গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। শনিবার ডেরার ‘গুফা’ থেকে সাধ্বী হোস্টেল পর্যন্ত একটি গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁর ডেরায় পানির নিচে গোপন ‘সেক্স কেভ’ বা ‘যৌন গুহার’ সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ডেরার প্রাসাদ চত্বরে যে সুইমিং পুল রয়েছে, তার নিচেই ওই ‘যৌন গুহা’ গড়ে তুলেছিলেন ডেরাপ্রধান রাম রহিম। গোপন গুহায় নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ করতেন তিনি। শুক্রবার রাম রহিমের ডেরায় শত শত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও ভিডিও চিত্র সাংবাদিকের বিশাল একটি দল অভিযান চালিয়ে এই গুহার সন্ধান পায়।
গত ২৫ আগস্ট দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে করা দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় রাম রহিমকে। এরপর নেওয়া হয় রোহতক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে। এতে রাম রহিমের সমর্থকেরা পঞ্চকুলা এলাকায় তাণ্ডব শুরু করেন। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হন। পরে ২৮ আগস্ট রাম রহিমকে দুটি মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন সিবিআই আদালত।
সূত্র : প্রথম আলো অনলাইন।