মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সিংহভাগই শিশু। এদের মধ্যে পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুর সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়।রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় দুই লাখের বেশি।
যা মোট রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১২৮টি পরিবার বিচ্ছিন্ন শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে। শরণার্খীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ। এসব শিশুদের জীবন বাঁচাতে জরুরি সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি কিছু জরুরি নিরাপত্তা পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
হঠাৎ পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনে নেমে এসেছে মানবিক বিপর্যয়। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে শিশুরা। গত ২৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলাতেই সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছেন।
বিপুল পরিমাণ এই শরণার্থীর ঢল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশে পৌঁছানো শরণার্থী শিশুদের এখনই জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রয়োজন।
চোখের সামনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিপুল ধ্বংসলীলা, খুন, ধর্ষণ এবং নিপীড়ন দেখে শিশুরা মানসিকভাবেও ভয়ানক বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা সেবাও এখন দরকার।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেক প্রসূতি মা রয়েছেন। অনেকেই আবার পথিমধ্যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বাংলাদেশে আসার পরে অনেক রেহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে। সব মিলিয়ে জরুরি সেবার প্রয়োজন এমন শিশুর সংখ্যা দুই লাখের বেশি।
গত ২৫ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলাতেই সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছেন। বিপুল পরিমাণ এই শরণার্থীর ঢল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের কয়েকটি সেনা ও পুলিশের চৌকিতে রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের হামলার অভিযোগে আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। হত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় গত দু’সপ্তাহে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।
পরিবার বিচ্ছিন্ন হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু
পূর্ববর্তী পোস্ট