৫০ টাকায় গল্প করা, ১০০ টাকায় হাত ধরা ও চুমুতে ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়লে মিলবে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগও।
রাজধানীতে চলছে ভাড়ায় প্রেম। ক্যাটরিনা, মল্লিকা, বিপাশারা অপেক্ষায় থাকে ভাড়াটে প্রেমিকদের জন্য। ঘণ্টা চুক্তিতে চলে তাদের প্রেম। ৫০ টাকায় গল্প করা, ১০০ টাকায় হাত ধরা ও চুমুতে ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার পরিমাণ বাড়লে মিলবে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগও।
এ প্রেমের ‘বাজার’ রাজধানীর পার্ক, সিনেমা হল ও বিনোদন কেন্দ্র ঘিরে। ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় মিলে সিনেমা হলের আড়াই ঘণ্টার প্রেম। এ সময়ের মধ্যে প্রেমিকার সঙ্গে বলা যাবে যে কোনো কথা; প্রেমিকা উত্তর দিতেও বাধ্য। বিছানায় যাওয়া ছাড়া যে কোনো আবদার মেটাবে ওই তরুণী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটা ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের রোজগারের নতুন কৌশল। এদের ভাড়াটে প্রেমিকা বলা হয়। তবে, পতিতাদের সবাই ভাড়াটে প্রেমিকা হতে পারেন না। এর জন্য ফর্সা গায়ের রঙ, বয়স কম (ত্রিশের মধ্যে) ও ছিমছাম শরীরের অধিকারী হতে হয়।
রাজধানীতে বাস করা বিভিন্ন পেশায় জড়িত ব্যাচেলররা এসব প্রেমিকাদের ভাড়া করে থাকেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণও ভাড়াটে প্রেমিকাদের নিয়ে পার্ক-বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরেন। তবে ভাড়াটে প্রেমিকাদের সিনেমা হলের সামনেই বেশি দেখা যায়। ভাড়াকারীরা এদের সঙ্গে বসিয়ে সিনেমা দেখেন, জড়িয়ে ধরেন, চুমু খান, কথা বলা ও খুনসুটি পর্যাযের সবই করেন। পাশে বসা তরুণীর তাতে দ্বিমত নেই। কারণ এটাই তার কাজ। এ কাজেই জন্যই তিনি টাকা নেন।
বিস্ময়ের ব্যাপার, রাজধানীতে পড়াশোনা করতে আসা দরিদ্র পরিবারের কিছু তরুণী অর্থের অভাবে পার্টটাইম হিসেবে এ কাজ করছেন। এমনই এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বন্যা (ছদ্মনাম ব্যবহার হলো) সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বেশ সুন্দরী, রাজধানীর একটি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার ভাষ্য, ভাই আমার নামটা প্রকাশ করবেন না। আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। আমার এক বান্ধবী এ কাজ ধরিয়ে দিয়েছে। বছরখানেক ধরে করছি, আমি পেশাদার না। শুধু টাকার জন্য এখানে আসি। এখনো কারো কাছে সতীত্ব হারায়নি। মাসে দশ-বারো দিন এ কাজ করি, সেটা দিয়েই আমার পুরো মাসের সব খরচ চলে জানালেন, তিনিই একা নন, তার মতো এ কাজে কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তিনি তাদের অনেককে চেনেনও।
রাজধানীর যে সিনেমা হলগুলোর সামনে ভাড়াটে প্রেমিকাদের বেশি দেখা যায়, তার মধ্যে টিকাটুলির অভিসার সিনেমা হল অন্যতম। অভিসারের কাছেই মধুমিতা সিনেমা হল, সেখানেও একই অবস্থা। অভিসার সিনেমা হলের সামনে প্রায় সর্বক্ষণ থাকেন ভ্রাম্যমাণ কোনো না কোনো পতিতা। পতিতা হলেও এদের কাজ অন্যসব পতিতাদের চেয়ে আলাদা। সিনেমা হলের ভেতর পুরুষদের প্রেমিকার মতো সময় দেবে- এমন চুক্তিতে আড়াই ঘণ্টার প্রেম নিবেদনে প্রেমিক হিসেবে খদ্দেরকে গুনতে হবে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। ভ্রাম্যমাণ এসব প্রেমিকার সঙ্গে ছবি দেখার আগ্রহ কম নয়- এমনটা দেখা গেল শুক্রবার বিকেলে অভিসার হলের সামনে। খদ্দের হিসেবে যারা ঢুকেন, তাদের বেশিরভাগই নিম্ন-আয়ের শ্রেণি-পেশার মানুষ। যুবক শ্রেণি বেশি।
টিকাটুলি মোড় থেকে অভিসার যেতেই হাতের ডানে একটি ফুলের দোকান। দোকান ছাড়িয়ে সামনে এগোতেই দেখা মেলে হেব্বি সাজের চার থেকে পাঁচ সদস্যের মেয়ে দল। এদের সবাই ভ্রাম্যমাণ পতিতার মতোই। কিন্তু সিনেমা হলে আড়াই ঘণ্টার প্রেম দেয়ার শর্তেই তারা দাম হাঁকাচ্ছে। আড়াই ঘণ্টার দর-দাম করে সবশেষ ৪০০ হলেই রাজি হবে এ প্রেমিকারা।
উঠতি বয়সের এক যুবককে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো মেয়েদের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল। কিছু সময় পর দেখা গেল- দুজনে সিনেমা হলের দিকে যাচ্ছে, ছেলেটি টিকিট সংগ্রহ করে মেয়েকে নিয়ে হলের ভেতরে ঢুকলো। এমনই আরেক মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- তার নাম স্বর্ণা, গ্রামের বাড়ি খুলনা। ছোট বেলায় বাবার দ্বিতীয় বিয়ের কারণে মায়ের কাছে খুব কষ্টে বড় হয়েছেন। বছর সাতেক আগে পরিচিত গ্রামের এক বড় বোনের সঙ্গে ঢাকায় আসে সে।
সিনেমা দেখায় ওই যুবককে সময় দেবে বলে হলে ঢুকেছে স্বর্ণা। আর বাইরে স্বর্ণার অপেক্ষায় প্রতিবেদক। যুবকের পাশে বসে সিনেমা দেখা শেষে বের হন তরুণী। প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ঢাকা এসে প্রথমে গার্মেন্টসে কাজ করি। কিন্তু কাজটি অনেক কষ্টের হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিই। পরে এক মেয়ের সঙ্গে এ কাজ শুরু করি।
স্বর্ণা বলেন, ‘আমরা সবাই দুঃখকে ‘জয়’ করতে এ পথের পথিক। আমি আজ এসেই একটা কাজ করেছি। একটু আগে যে মেয়েটি গেল তার নাম অনামিকা। সে ৫০০ টাকা চুক্তিতে গেছে। সেও আমার মতো ছয়-সাত বছর থেকে এ পেশায়।
স্বর্ণা বলেন, এখানে পনেরো-বিশ জনের মতো আছি। সবার নাম তো বলা যাবে না। তবে আমার জানা মতে শিল্পী, সাথী, অনামিকা, স্মৃতি, হাসনা ছাড়াও রয়েছে বিশ জনের মতো। কথা হয় শিল্পীর সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘আমি হল ছাড়াও খদ্দেরের বাসায় যাই। সে ক্ষেত্রে বিল একটু বেশি। অনেকে সিনেমা হলে ভালো লাগলে বাসায় নিয়ে যায় আলাদা চুক্তিতে।’
যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা থেকে ছয়টার শো সিনেমা দেখতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, এরা চুক্তিতে সব করে। হলের ভেতর শুধু জড়িয়ে ধরে ছবি দেখা যায়, আবার পরে কোথাও নিতে চাইলে বেশি দাম হাঁকায়, অনেকটা চুক্তির মাঝে ভিন্ন ফাঁদ। তবে ঝামেলা করে না। হলের ভেতর ‘অন্য কিছু’ করা বা কাউকে হেনস্থা করা হল মালিকদের নিষেধ। তাই অন্য ঝামেলায় কম পড়তে হয়।
অভিসার সিনেমা হলের সিট মিস্ত্রি মোস্তফা বলেন, কোনো ভেজাল মেয়ে হলে ঢুকতে পারে না। আবার ঢুকলেও মানুষের ব্যাপার, আমরা টিকিট ছাড়া কাউকে ঢুকতে দিই না।
এ এলাকায় দায়িত্বরত এএসআই মমিনুর বলেন, আমরা এদের দেখলেই ধাওয়া করি। এরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে যায়। আবার সুযোগ পেলেই আসে। ওসি স্যারের নির্দেশ- এসব মেয়ে যাতে এখানে দাঁড়াতে না পারে।