আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরায় অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। রাইস মিল মালিক ও খুচরা বিক্রেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যদিয়ে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা।
জানা গেছে, গত দু’সপ্তাহের ব্যবধানে সাতক্ষীরার বাজারে কেজি প্রতি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা। ঠিক একইভাবে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা। রাইস মিল মালিকদের দাবি, ধানের অভাবে মিলে আশানুরুপ চাল উৎপাদন হচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলের বন্যায় প্রয়োজনীয় ধান পাওয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, শুধুমাত্র ভারত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে এমন গুজবের কারণে বিক্রেতারা চাল দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এতে নাভিঃশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। কোন উপায় না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা। তাই চাল নিয়ে আর চালবাজি না করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ মানুষেরা।
শ্রমজীবি আব্দুস সামাদ, রিকসা চালক কিসমত আলীসহ একাধিক খেটে খাওয়া মানুষ জানান, চালের দাম এখন অনেক বেড়ে গেছে। মোটা চাল কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৫৩ টাকা কিনতে হচ্ছে। সে হিসেবে আমাদের আয় বাড়েনি। তার উপর ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে সংসার চালানো এখন খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা রাইস মিল মালিক সমিতির মো. মশিউর রহমান জানান, সদর উপজেলা ১৪০ টি রাইস মিল নিবন্ধনকৃত। ধানের অভাবে ইতিমধ্যে ৫০/৬০ মিল বন্ধ হয়ে গেছে। চাল ও ধান মজুদের কারনে দাম যে উদ্ধগতি বলা হচ্ছে এটি সঠিক নয়। কারণ আমাদের মিলে গেলেই দেখবেন চাল কোন মজুদ নাই বরং ধানের ঘাটতি। ধানের সংকটের কারণে আমাদের বেশীরভাগ মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, চালের মূল্য বৃদ্ধি মূল কারণ হল ধানের মূল্য বৃদ্ধি। এখন কাঁচা ধান আমাদেও কিনতে হচ্ছে বস্তা প্রতি ১২ থেকে ১৩’শ টাকা। এ থেকে আমরা চাল পাচ্ছি মাত্র ৩০ কেজি। এই ত্রিশ কেজি চালের দাম হিসাব করলে দেখা যায় ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজি পড়ে যাচ্ছে। বাজারে এই চালের দামটা আমরা কত বিক্রি করবো। আসলে ধানের দাম উর্ধগতি হওয়ায় চালের দামও উর্ধগতি।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এহসান বাহার বুলবুল জানান, সাতক্ষীরা জেলায় প্রতিবছর যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়, তাতে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় দুই লক্ষ মেট্টিক টন চাল। যা আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকি। তিনি আরো জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে এমন অপপ্রচার দেয়া হচ্ছে যা সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করে বলেন ভারত থেকে প্রতিদিন চাল ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানী হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার মেট্টিক টন চাল আমদানি হচ্ছে। যদি কোন অসাধু ব্যবসায়ী চাল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তাহলে তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতিমধ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট