প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। এ নিয়ে আমাদের সরকার, আমার পরিবারের উপর অনেক অপবাদ দেওয়া হয়েছে, হেয় করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। কিন্তু এটি দৃশ্যমান হওয়ায় সেসব অপমানের জবাব দেওয়া হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, ‘২০০১ সালে যখন গ্যাস দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তখনো আমি যেটা সত্য সেটা বলেছিলাম। তার খেসারত আমাকে দিতে হয়েছিল, আমি জানি। সত্যের জয় হয়তো তাৎক্ষণিক হবে না। মিথ্যার জয় তাৎক্ষণিক হবে। কিন্তু আসলে সময়মতো সত্যের জয় হবেই। এটা আমার বিশ্বাস। এটা সময়ের ব্যাপার। এই সময়টা ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তিন সপ্তাহের সফর শেষে আজ শনিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে সরকারের উচ্চপদস্ত মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সেখানেই এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে অভিনন্দন জানান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাই তিনি দুনিয়ায় বিপন্ন মানবতার বাতিঘরে পরিণত হয়েছেন। তাই এ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।
বিমানবন্দরে সংবর্ধনার পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের একপর্যায়ে পদ্মাসেতুর প্রসঙ্গও তুলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পদ্মাসেতু বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। এ নিয়ে আমাদের সরকার, আমার পরিবারের উপর অনেক অপবাদ দেওয়া হয়েছে, হেয় করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। আমাদের দেশে কিছু লোক তো আছেই যারা এগুলো পেলে আরো উৎসাহিত হয়। কিন্তু আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করতে এসেছি। নিজের ভাগ্য বদলের জন্য আসিনি।’
‘আমরা বিশ্ব্যবাংকের অর্থায়ন না করার বিষয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের একজন এখানে এসে আমার নামে অপবাদ দিয়েছে। পরে দুর্নীতির কথা বলে এই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাকে, রেহানাকে, আমার ছেলে-মেয়েকে দুনীতির তদন্তের নামে আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে এমন মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে যেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। সেটা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের জন্য ছিল দুঃসময়। কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এখন শুনছি, সেই তদন্তকারীর নামেই দুর্নীতির নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমরা করতে পারব এটা অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়নি। আমাদের অনেক সিনিয়র ক্যাবিনেট সদস্যও বিশ্বাস করেননি। তাদের কথা ছিল, বিশ্বব্যাংকের সাহায্য ছাড়া এটা করা যাবে না। কিন্তু আমি বলেছিলাম, যত দিন নিজেদের অর্থে করতে না পারব তত দিন করব না। কিন্তু মিথ্যা অপবাদ নিয়ে পদ্মা সেতু করব না। ক্ষমতার লোভে আর নির্বাচনের জেতার লোভে এটা আমি করব না। এটা আমার স্বভাব না।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, যখন অর্থায়নের কথা বলেছি, দেশ-বিদেশে অভূতপূর্ভ সাড়া পেয়েছি। আস্থা অর্জন করা একজন রাজনীতিকের জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। যখন পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসল, সত্যি কথা বলতে কী, এসব ছবি, ভিডিও দেখে আমরা দুই বোন কেঁদেছি। অনেক অপমানের জবাব আমরা দিতে পারলাম।