এস এম, আহম্মাদ উল্যাহ বাচ্ছু : কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের উপজেলা পোস্ট অফিসটির ভবনের ছাদে ফাঁটল, গ্রিল ও প্রচীর ভেঙে নানা সমস্যায় জর্জরীত ও অরক্ষিত। পোস্ট অফিসের প্রচীর ভেঙে পুকুরে পড়ে যাওয়ায় ইট ও গ্রিল চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া প্রচীর ভেঙে পড়ার কারণে দিন ও রাতে অফিস চত্ত্বরে গরু, ছাগল ও বহিরাগত মানুষদের অবাদ চলাফেরায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পোস্ট অফিসের বিল্ডিংয়ের ছাদে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। কর্মকর্তা কর্মচারীরা জীবন ও জীবিকার তাগিদে ঝুকি নিয়ে কাজ করছে। উপজেলা পোস্ট অফিসে সঞ্চয় পত্রের গ্রহক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চয়পত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। একই ক্যাম্পাসের মধ্যে রয়েছে চার উপজেলা নিয়ে গঠিত সার্কেল পোস্ট অফিস। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চলে টিনের জরাজীর্ণ ঘরে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই অফিসে প্রতিদিন শত শত মানুষ কাজ কর্ম নিয়ে আসলেও পোস্ট অফিসের দৈন্যদশা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে না। এই অফিসটি বর্তমান সময়ে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিকায়ন একান্ত প্রয়োজন। দেশের সবখানে শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার রয়েছে। ইন্টারনেট সুবিধা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় এসে দাড়িয়েছে। দূরে থাকা প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করতে এখন আর আগের মতো পোস্টকার্ড বা ইনভেলাপ চিঠি লিখে ডাকে পাঠাতে হয়না। তাই কোথাও কোথাও ডাক বিভাগের ডাকবাক্সগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে কিম্বা সারা বছর চিঠিশুন্য হয়ে রয়েছে। বিগত দিনে একটা সময় ছিল দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধবদের সাথে ভাব আদান একমাত্র ব্যবস্থা ছিল বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। সে সময় রানার পিঠে বোঝা ঝুলিয়ে ছুটতেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত। এ ডাক পিয়নদের এখন আমরা বলি পোস্টম্যান। সেই ব্যক্তি দরজায় কড়া নেড়ে বলতেন বাসায় আছেন, আপনার চিঠি আছে। ডাক পিয়নের আওয়াজ শুনলেই মন চমকে উঠে। কি জানি এই চিঠিতে কি গোপনীয় সংবাদ লুকিয়ে আছে। চিঠিখানা খোলার পূর্বেই হ্নৎকম্পন শুরু হত। সেই সময় ডাক পিয়ন বা রানার কতটা পথ পাড়ি দিয়ে প্রাপকের কাছে চিঠি পৌছে দিতেন। সেই যুগে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আজকের মত এতোটা উন্নত ছিলনা। রাস্তা ঘাট ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি সেই সময়, নৌ-পথ ছিল চলাচলের একমাত্র উপায়। সেই অবস্থায় দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে রানার বা ডাক পিয়ন চিঠির বোঝা নিয়ে ছুটতেন আমাদের কাছে বার্তা পৌছে দিতে। সময় পাল্টে গেছে, বর্তমান সময়ে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে, তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে। এখন মানুষের চিঠি লেখার প্রবনতা একবারেই নেই বললেই চলে। সেই সময় চিঠির মধ্যে দিয়ে যে মনের অব্যক্ত ভাষা ফুটিয়ে তোলা যায় তা কিন্ত অন্য কোন মাধ্যমেই সেটা সম্ভব না। এখনো হয়তো কেউ কেউ একখানা চিঠি লিখে পোস্টবাক্সে ফেলে আসেন। কিন্ত তার সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। আগামিতে এমনও হতে পারে চিঠি লিখে পোস্ট করার বিষয়টি কাহিনী গল্প হিসাবে পরবর্তী প্রজম্মের কাছে উঠে আসবে। এখন মোবাইল ফোনের দুই তিন লাইনের একটি মেসেজ চিঠির সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও এক দশক পেরিয়ে গেলেও সেই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। উপজেলা পোস্ট অফিসে উদ্যোক্তা কামরুন্নাহার জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় এর উদ্দ্যোগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমি ও আমিরুল ইসলাম দেড় বছর যাবৎ কাজ করছি। সে আরো জানায় পোস্ট অফিসের একটি কক্ষে ৩ ও ৬ মাস মেয়াদী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চাকুরীর বিভিন্ন তথ্য প্রদানসহ অনলাইনের মাধ্যমে চাকরি, ভর্তিসহ বিভিন্ন ধরণের ফরম পূরণের কাজ চলছে এই পোস্ট অফিসে। পাশাপাশি স্কানিং, ছবি তোলা, কম্পিউটার কম্পোজের কাজও করা হয়। উপজেলা পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার সত্য প্রসাদ বাইন এ প্রতিনিধিকে জানান, বর্তমানে এই পোস্ট অফিসে সঞ্চয় ব্যাংকিং কার্যক্রমের চাপ খুব বেশী। গ্রহকরা সঞ্চয়পত্র খুলতে অতি উৎসাহ হয়ে বেশী ভীড় করছে। এছাড়া পোস্ট অফিসের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। তবে পোস্ট অফিসের ভবন জরাজির্ন ও ছাদে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় আমরা সর্বক্ষণ জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছি। প্রচীর, গ্রীল, গেট নষ্ট হওয়ায় অফিস চত্ত্বর অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীতায় মধ্যে আমাদের কাজ কর্ম চালাতে হচ্ছে। বিষয়টি খুলনা পোস্ট অফিসের উর্দ্ধোতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি। ভবন, প্রচীর ও গেট সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে কবে নাগাদ এই সংস্কারের কাজ শুরু হবে সেটা বলা সম্বব না। তিনি আরো বলেন সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সমঞ্জস্য রেখে আমরা কাজ করছি।
সমস্যায় জর্জরিত কালিগঞ্জ পোস্ট অফিস ভবন ও প্রাচীর
পূর্ববর্তী পোস্ট