মেয়েটির নাম তাহেরা। বয়স মাত্র ১০ বছর। এই বয়সেই রান্নার জ্বালানি সংগ্রহ করতে তাকে প্রায় ১ মাইল পথ পারি দিতে হয়েছে। কারণ তার বাবা-মা ও চার ভাইবোনের সবাই অসুস্থ। তাহেরা ছাড়া এ কাজ করার মতো আর কেউই নেই বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানায় সে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশু। তাদের কেউ কেউ আবার হয়ে পড়েছে পরিবার বিচ্ছিন্ন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে অন্তত ১৪০০ শিশু তাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। যে কারণে শিশু হয়েও তাদের উপর দায়িত্বের বোঝাটা অনেক বড়।
একাধিক শিশু থাকায় অনেক রোহিঙ্গা পরিবারে দেখা গেছে একটি শিশুর কোলে আরেকটি শিশুকে। এই দৃশ্যকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতি সংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ।
সংস্থাটি তাদের ফেসবুক পেজে ছোট্ট যে রোহিঙ্গা শিশুটির কথা উল্লেখ করেছে, তার নাম আফিয়া। যার বয়স মাত্র ১০ বছর। সে ইউনিসেফ পরিচালিত পুষ্টি কেন্দ্রে এসেছে তার ১০-মাস বয়সী ছোটবোন রেশমাকে নিয়ে। চরম অপুষ্টি এবং চর্মরোগ-এর চিকিৎসার জন্য।
প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে সাথে সাথে ব্যবহার উপযোগী পুষ্টিবর্ধক খাবার খাওয়ার পর, আস্তে আস্তে ভালো হচ্ছে সে।
সেখানে কাজ করা সেবা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা এই সব দায়িত্ব পালন করতে করতে তারা আরো বেশি অসুস্থতার শিকার হবে, এমনকি জড়িয়ে পড়তে পারে যৌনকর্মেও। অথবা শিকার হবে আবেগিক চাপের।
সেভ দ্য চিলড্রেনের মুখপাত্র রিক গভার্ডি সাংবাদিকদের বলেন, এই পরিস্থিতি শিশুশ্রম আরো বাড়িয়ে তুলবে। বাড়বে বাল্যবিবাহের হার। যা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের বেশিরভাগই অপুষ্টির শিকার। ইউনিসেফ প্রবলভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে, যেসব রোহিঙ্গা শিশুর শৈশব নষ্ট হয়ে গেছে, কোনোভাবেই যেন তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট না হয় সেই নিশ্চয়তা দিতে।
পরিবারের শিশুদের মধ্যে বড় হওয়ায় বয়সে ছোট শিশুটিকেও নিতে হচ্ছে বেশ কিছু দায়িত্ব। দূর থেকে পানি বয়ে আনা, ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অথবা নিজের শরীরের চেয়েও ভারী বস্তা বহন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুদের নিয়মিত চিত্র।
জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে এরই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। ভেসে আসা এসব শিশুদের জন্য শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করছে ইউনিসেফ। এমনকি নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানসিক সেবার দিকেও নজর দিচ্ছে ইউনিসেফ।