ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশকে এখন পুরোপুরি দারিদ্রমুক্ত করতে চাই। আগে দেশে দারিদ্রের হার ছিলো ৯৭ ভাগ, আজ আমরা সেটাকে ২২ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এমন পর্যায়ে দেশকে নিয়ে যেতে চাই যে সেখানে দরিদ্র বলে কেউ থাকবে না। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১৪৬৬ ডলার। এই আয় এত বাড়াবো যেন এদেশে আর কেউ কখনো দরিদ্র না হয়।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলে।
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীদের আমি আহবান জানাবো, আপনারা স্ব স্ব এলাকায় কতজন নি:স্ব-রিক্ত মানুষ আছে তাদের তালিকা দিন। আমরা তাদের জন্য বিনা পয়সায় ঘর করে দিবো। তাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের। বাংলাদেশ থেকে আমরা পুষ্টিহীনতা দূর করবো। সমগ্র দেশের মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় সেই চেষ্টা করবো। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করবো।’
অতীতের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রাচীনতম সংগঠনগুলোর একটি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জন্যই আজ আমরা বাঙালি হিসেবে পরিচয় পেয়েছি। বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। আওয়ামী লীগই বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই অর্জন এনে দিয়েছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয় দফা, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। সব সমস্যার মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে মুক্তি এনে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।’
“এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাংলার মানুষ তার কথা মেনে নিয়েছিলো। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেরই মিত্র শক্তির কাছে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন করেই। সবাই সহযোগিতা করেছিলো বলেই বিজয় অর্জন সহজ হয়েছিলো। ৮১ সালে আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে আওয়ামী লীগ। জনসমর্থনে আমি দেশে ফিরে আসি। আমি আওয়ামী লীগের কাছে কৃতজ্ঞ। দেশে ফিরে সেই সময় দেশের আনাচে কানাচে আমি ঘুরে বেড়াই। আমি দেখেছি মানুষ না খেয়ে থাকে। কুড়েঘরে থাকে। বাবার কাছে যে শিক্ষা আমি পেয়েছিলাম, সেই শিক্ষা নিয়েই আমি কাজ শুরু করি। গ্রামের মানুষের ভালোবাসাই আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে মায়ের স্নেহ, বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ।”
আওয়ামী লীগের বর্তমান কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও যেন না খেয়ে না থাকে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি আমরা। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে মাইক্রোক্রেডিট নয় মাইক্রো সেভিংস কার্যক্রম শুরু করছি। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন না। বিনা জামানতে ২ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারছে যুবকরা। যেন তারা কিছু করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। দেশব্যাপি ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। কৃষিকাজকে যান্ত্রিকীকরণ করছি যেন আবার সবাই কৃষিতে ফিরে। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি নির্বাচনে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশই বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে স্পিকার, দলীয় প্রধান, বিরোধী দলীয় প্রধান নারী।’
ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা তুলে তিনি বলেন, ‘দ্রুত পদক্ষেপের কারণে দেশে ৭ ভাগ থেকে বনায়ন ১৩ ভাগে উন্নয়ন করা হয়েছে। সেটাকে বিশ ভাগে নিয়ে যেতে চাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। সেজন্য বলেছি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই ভূখণ্ড কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়া হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন। সেটাই হবে বাংলাদেশও। তাই উন্নয়ন ব্যবস্থায় নজর দিয়েছি।’
“কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য থাকবে না। রাজধানী থেকে একেবারে গ্রামের ঘর পর্যন্ত যোগাযোগ থাকবে সেজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকেও নজর দিচ্ছি আমরা। আমরা চাই সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। তার প্রমাণ পেয়েছেন আজকের সম্মেলনেও। বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো আজকের এই আয়োজনে এসেছে এবং তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।”