স্বাস্থ্য ও জীবন : হালকা হোক কী জোরালো, ব্যথা মানেই আমাদের প্রথম পছন্দ পেইন কিলার। কিন্তু এমনভাবে ওভার দা কাউন্টার পেইন কিলার কিনে খাওয়াটা যে কতটা ক্ষতিকারক তা কি জানা আছে? সম্প্রতি নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত হারে পেইনকিলার খেলে দেহের ওজন বাড়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে ওজন বৃদ্ধি মানেই তার সঙ্গে লেজুড় হওয়া ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং হার্টের রোগের মতো মারণ ব্যাধি। আর একবার যদি এই রোগগুলির কোনওটা শরীরে এসে বাসা বাঁধে, তাহলে যে কী হতে পারে, তা নিশ্চয় আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না!
এখানেই শেষ নয়, আরও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়ম ছাড়া পেইনকিলার সেবন করলে ফুসফুস, পাকস্থলী, অন্ত্র, লিভার, কিডনি সহ শরীরে একধিক অঙ্গ তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ফলে দেখা দেয় নানা জটিল রোগ। তাই এবার আপানিই সিদ্ধান্ত নিন, যন্ত্রণা কমাতে গিয়ে জটিল কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে চান কি?
আপনার উত্তর যদি না হয়, তাহলে একবার চোখ রাখুন এই লেখায়। এই লেখায় এমন কিছু প্রাকৃতিক পেইনকিলার সম্পর্কে আলোচনা করা হল, যা যন্ত্রণা তো কমায়ই, সেই সঙ্গে শরীরের কোনও ক্ষতি হতে দেয় না। উল্টো নানা উপকারে লাগে। যে যে প্রকৃতিক উপাদানগুলি এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…
১. দই
এতে রয়েছে বেশ কিছু ভাল ব্যাকটেরিয়া, যা যন্ত্রণা কমায়। বিশেষত তলপেটের যন্ত্রণা কমাতে এইসব ব্যাকটেরিয়াগুলি দারুণ কাজে দেয়।
২. হলুদ
ব্যথা কমাতে ভারতীয় এই মশলাটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে।
কারণ কি জানেন? হলুদে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা যন্ত্রণা কমানোর পাশাপাশি ফোলা ভাব কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, বাজার চলতি একাধিক জনপ্রিয় পেইনকিলার থেকে কোনও অংশে কম কাজে আসে না এই ঘরোয়া ওষুধটি। তাই এবার থেকে শরীরের কোথাও চোট-আঘাত লাগলে এক গ্লাস দুধে হলুদ মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। দেখবেন আনেক আরাম পাবেন।
৩. চেরি
যন্ত্রণা কমাতে এই ফলটি দারুণ কাজে আসে। এতে অ্যান্থোসায়ানিস নামে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে প্রদাহ কমায়। ফলে এই ফলটি খেলে ব্যথা কমতে শুরু করে।
৪. আদা
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় যন্ত্রণা কমাতে আদা দারুণ কাজে দেয়। বিশেষত, আর্থ্রারাইটিস, পাকস্থলির যন্ত্রণা, বুকের ব্যথা, পিরিয়ডের যন্ত্রণা এবং পেশির ব্যথা কমাতে আদার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। যে জায়গায় যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে অল্প করে আদা বেটে লাগিয়ে দিন অথবা আদা চা খেলেই হাতেনাতে ফল পাবেন।
৫. লবণ
গোসল করার সময় ১০-১৫ চামচ লবণে পানি মিশিয়ে দিন। তরপর সেই পানিতে কম করে ১৫ মিনিট শুয়ে থাকুন। এমনটা করলে দেখবেন প্রদাহ বা যন্ত্রণা কমতে শুরু করবে। লবণ কোষকে তরতাজা করে তোলে। ফলে যন্ত্রণার প্রকোপ কমে যায়।
৬. লাল আঙুর
সেভাবে জনপ্রিয়তা না পেলেও যে কোনও ধরনের ব্যথা কমাতে এই ফলটি দারুণ কাজে লাগে। কারণ লাল আঙুরে রয়েছে রেভারেট্রল নামে একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কম্পাউন্ড, যা কার্টিলজকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি জয়েন্ট পেইন এবং পিঠের পেইন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. সোয়াবিন
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে অর্থ্রাইটিস, বিশেষত অস্টিওআর্থ্রারাইটিসের যন্ত্রণা কমাতে সোয়া প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সোয়াতে ইসোফ্লেবোনস নামে একটি অ্যান্টি-ইনফ্লমেটরি উপাদান থাকে, যা প্রদাহ কমায়। তাই আপনি যদি আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন সোয়া মিল্ক।
৮. ঝাল মরিচ
খাবারে অর্ধেক চামচ ঝাল মরিচ মিশিয়ে সেই খাবার খেয়ে ফেলুন। অল্প সময়ের মধ্যেই যে কোনও ধরণের যন্ত্রণা কমে যাবে। আসলে মরিচে কেপসাইসিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা ব্যথা কমায়।
৯. মিন্ট পাতা
পেশিতে যন্ত্রণা হচ্ছে বা দাঁতের যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই কাবু হয়ে পড়েন? চিন্তা নেই এবার থেকে এমনটা হলেই এক মুঠো মিন্ট পাতা চিবিয়ে খেয়ে নেবেন। অল্প সময়ের মধ্যেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। প্রসঙ্গত, মাথা যন্ত্রণা, নার্ভের পেইন এমনকি পেটের নানা গোলযোগ সারাতেও এটি দারুণ কাজে দেয়।
১০. কফি
কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন নামের একটি উপাদান। এটি যন্ত্রণার প্রকোপ কমায়। এমনকি মাথার যন্ত্রণা কমাতেও দারুন কাজে আসে ক্যাফেইন। তবে এ প্রসঙ্গে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, বেশি মাত্রায় কফি খাওয়া একবারেই উচিত নয়। শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন প্রবেশ করলে অন্য ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দিনে এক কাপের বেশি কফি খাওয়া নৈব নৈব চ!
পূর্ববর্তী পোস্ট