সস্থায় সুস্থ থাকতে ডিমের কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। কিন্তু একথাও ঠিক যে প্রতিদিন ডিম খেলে মস্তিষ্কের ভেতরে নানা পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর এই পরিবর্তন আদৌ স্বাস্থ্যকর কিনা সে বিষয়ে জানা আছে কি?
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে। স্টিডিটি চসাকালীন দেখা গেছে প্রতিদিনের ডায়েটে ডিমকে রাখলে শরীরের ভেতরে এমন কিছু উপাকারি উপাদানের মাত্রা বাড়তে থাকে যে তার প্রভাবে ব্রেন সেল শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি বুদ্ধির ধারও বাড়তে শুরু করে। তাই মস্তষ্কের ভেতরের এই পরিবর্তন যে আদৌ নেতিবাচক নয়, সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ থাকে না।
প্রসঙ্গত, আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশানে প্রকাশিত এই গবেষণা পত্রটি অনুসারে ডিমের ভেতরে উপস্থিত কোলিন এবং ডোকোসেহেক্সেনিক অ্যাসিড নামক দুটি উপাদানের মাত্রা শরীরে যত বাড়তে থাকে, তত ব্রেন পাওয়ারে উন্নতি ঘটে। সেই কারণেই তো গবেষকরা ৬ বছরের পর থেকেই বাচ্চাদের ডিম খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ এই সময় বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশ সবথেকে দ্রুত গতিতে হতে থাকে। তাই তো ছয় বচরের পর থেকে প্রতিটি বাচ্চারই ডিম কাওয়া মাস্ট! প্রসঙ্গত, ডিমে কোলিন ছাড়াও বেশ কিছু উপকারি ফ্য়াটি অ্যাসডি, ভিটামিন এ, বি১২, সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান মজুত থাকে, যা ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখার পাশাপাশি শরীরের আরও নানা উপাকারে লাগে। যেমন ধরুন…
১. প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে:
একটা ডিমে কম বেশি প্রায় ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। আর দিনের চাহিদা হল ৫০ গ্রাম প্রোটিন। তাই দিনে কম করে তিনটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এমনটা করলে প্রায় ১৯.৫ গ্রাম প্রোটিনের ঘাটতি মেটে। বাকিটা মাছ, মাংস অথবা ডায়াটারি প্রোডাক্টের মাধ্যমে পূরণ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এবার থেকে তাই দিনে ৩ টে ডিম খেতে ভুলবেন না যেন!
২. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে:
প্রতিদিন নিয়ম করে ডিম খেলে শরীরে উপকারি কোলস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা যত কমবে, তত হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়বে। তাই পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে ডিম খেতে ভুলবেন না যেন!
৩. ওজন কমায়:
অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি চিন্তায় আছেন? তাহলে প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে একটা করে ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ওজন কমবে চোখে পরার মতো। আসলে ডিমের ভেতরে থাকা একাদিক উপকারি উপাদান অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে শরীরে ক্যালরির প্রবেশ কম হওয়ায় ওজন কমতে সময় লাগে না।
৪. ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে:
শরীরকে সচল রাখতে প্রতিদিন বি২, বি১২, এ এবং ই ভিটামিনের প্রয়োজন পরে, যার জোগান দিতে ডিমের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রসঙ্গত, ভিটামিন বি২ এনার্জির ঘাটতি পূরণ করে, যেখানে বি১২ লহিত রক্ত কণিকার ঘটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর “এ” এবং “ই” ভিটামিন কী কাজে লাগে? ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়। আর ই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিযে রোগমুক্ত জীবনের পথ প্রশস্ত করে।
৫. খনিজের ঘাটতি দূর করে:
ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, জিঙ্ক এবং ফসফরাস। এই খনিজগুলি রক্তাল্পতা দূর করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে এবং হাড়ের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, ডিমে সেলেনিয়াম বলে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. ব্রেস্ট ক্যান্সারকে দূরে রাখে:
হাবার্ড ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে কম করে ৬ টা ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৪৪ শতাংশ কমে যায়। আসলে ডিমে উপস্থিত কোলিন নামক একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. হাড়কে শক্তপোক্ত করে তোলে:
বুড়ো বয়সে আর্থ্রাইটিস বা ঐ জাতীয় কোনও বোন ডিজিজে আক্রান্ত হতে না চাইলে এখন থেকেই প্রতিদিন ১-২ টো করে ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপাকার মিলবে। আসলে ডিমে উপস্থিত ভিটামিন ডি৩ হাড়কে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে তাকে। তাই তো এই উপাদানটির ঘাটতি দূর হলে স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও দূর হয়।
৮. রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে:
পুরো শীতকালটা যদি শরীরকে সংক্রমণ এবং নানাবিধ রোগের খপ্পর থেকে দূরে রাখতে চান, তাহলে ডিম কেতে ভুলবেন না যেন! কারণ এমনটা করলে শরীরে ভিটামিন ই এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এই দুটি উপাদান ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।