গ্রিক পুরাণের ‘ফিনিক্স’ পাখির গল্পটা প্রায় সবারই জানা। পূর্বসূরির ছাই থেকে পুনর্জন্ম নিত এই পাখি, বেঁচে থাকত বছরের পর বছর ধরে। ক্রিকেট ইতিহাসের বিখ্যাত ‘ছাই’ (অ্যাশেজ) সিরিজে সেই ফিনিক্স পাখির মতোই পুনর্জন্ম নিয়েছেন অ্যালিস্টার কুক। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ২৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভেঙেছেন ৪৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড!
‘ক্যারিং দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস’-এর ইতিহাসে এত রান করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান। চতুর্থ দিনের প্রথম বলেই সঙ্গী জেমস অ্যান্ডারসন আউট না হলে রানটা আরও বাড়তে পারত। শেষ পর্যন্ত ৪৯১ রানেই থেমেছে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। মেলবোর্নে চারবার বৃষ্টি হানা দেওয়ায় বারবার বিঘ্ন ঘটেছে চতুর্থ দিনের খেলায়। ২ উইকেটে ১০৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। উইকেটে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার (৪০*) এবং স্টিভেন স্মিথ (২৫*)। হাতে ৮ উইকেট নিয়ে ৬১ রানে পিছিয়ে রয়েছে স্বাগতিকরা।
শত বছরের পুরোনো টেস্ট ইতিহাসে ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট’ এর ঘটনা প্রায় হাতেগোনা। এ পর্যন্ত ২ হাজার ২৮৯টি টেস্টে মাত্র ৫২ বার এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে একজন ওপেনার ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন। টেস্টে শুরুর দিনগুলোয় এমন ঘটনা ছিল একেবারেই বিরল। তবে গত কয়েক বছর ধরে এমনটা মাঝেমধ্যেই দেখা গিয়েছে। এ বছর প্রথমবার এই কীর্তি অর্জন করলেন কুক। গত বছর অক্টোবরে শারজায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিবীয় ওপেনার ক্রেইগ ব্রাফেটের ১৪২ রানের ইনিংসই ছিল ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট’-এর সর্বশেষ ঘটনা।
মেলবোর্নে সিরিজের চতুর্থ টেস্টের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে ব্যাট করে এই রেকর্ড গড়েছেন কুক। ম্যারাথন এই ইনিংস খেলার পথে ৪০৯ বল খেলেছেন এই বাঁ হাতি, উইকেটে ছিলেন ৬৩৪ মিনিট। ‘ক্যারিং দ্য ব্যাট’-এর ইতিহাসে এর আগের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল নিউজিল্যান্ডের গ্লেন টার্নারের ২২৩। এর মাঝেই এমসিজিতে কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন কুক। ছাড়িয়েছেন ১৯৮৪ তে করা ভিভ রিচার্ডসের ২০৮ রানকে। কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যান সর্বশেষ এমন কীর্তি গড়েছিলেন ২০ বছর আগে। ১৯৯৭ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন আরেক সাবেক অধিনায়ক মাইক আথারটন। অ্যাশেজের ইতিহাসে তো এমন ঘটনা আরও আগের। ১৯৭৯ সালের পার্থ টেস্টে জিওফ্রে বয়কট এই রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু কুকের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ে এ সবই পেছনে পড়েছে।
অথচ এই টেস্ট শুরুর আগেও কুককে দল থেকে বাদ দিতে যেন উঠেপড়ে লেগেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তার কারণও ছিল। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে কোনো ফিফটির দেখা যে পাননি টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক। চলতি অ্যাশেজে প্রথম তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে তাঁর অবদান মাত্র ৮৩ রান। চতুর্থ টেস্ট শুরুর আগেই অ্যাশেজ খুইয়ে ধুঁকছিল জো রুটের ইংল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের আগুনে পুড়ে যাওয়া ইংলিশ ছাইয়ে দাঁড়িয়ে টেস্ট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস খেললেন সাবেক অধিনায়ক। একবিংশ শতাব্দীর উত্তরাধুনিক যুগে এসেও ফিনিক্স পাখির মতো পুনর্জন্ম নিলেন অ্যালিস্টার কুক।