ধুলিহর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহরে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী আব্দুল হামিদ (৩২) কে সোমবার দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে। আব্দুল হামিদের বাড়ি ধুলিহর ইউনিয়নের যুগীপোতা গ্রামে। সে মৃত আলী একুব্বর আলীর পুত্র। এছাড়া আব্দুল হামিদ ধুলিহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৫নং ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক।
জানা যায়, গত শুক্রবার সকালে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে যুগীপোতা গ্রামের মৃত মুল্লুক চাঁদ মন্ডলের পুত্র নগেন্দ্র নাথ মন্ডল শিবিরডাঙ্গা মাঠ থেকে ফেরার পথে একা পেয়ে আব্দুল হামিদ মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে রক্তাত্ত জখম করে। এতে নগেন্দ্র নাথ মন্ডলের মাথায় দায়ের কোপে গুরতর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এসব খবর পেয়ে নগেন্দ্র নাথ মন্ডলের স্ত্রী দিপালী রাণী ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও মারপিট করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হামিদ মাছ বিক্রির পঞ্চাশ হাজার টাকা ও স্বর্ণের চেইন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। এমনকি মারাত্মক আহত নগেন্দ্র নাথ মন্ডলকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেও দফায় দফায় বাঁধা প্রদান করা হয় এবং সম্প্রদায় তুলে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ, দেশ ছাড়ার ও জীবন নাশের বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। স্থানীয় লোকজন নগেন্দ্র নাথ মন্ডলকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় ভর্তি করে। এ ঘটনায় নগেন্দ্র নাথ মন্ডলের স্ত্রী দিপালী রাণী বাদী হয়ে আব্দুল হামিদকে আসামী করে গত শনিবার সাতক্ষীরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত শেষে মামলাটি রেকর্ড করে। সাতক্ষীরা থানার মামলা নং-০২, তাং-০১/০১/১৮ ইং। মামলার পরপরই সোমবার দিবাগত গভীর রাতে ব্রহ্মরাজপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস,আই এমদাদুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে আব্দুল হামিদকে তার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। একটি সূত্র জানায়, আব্দুল হামিদ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি, ঘের দখল, অবৈধ গর্ভপাত, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। ইতিপূর্বে আব্দুল হামিদ মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে জোরপূর্বক বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়ে বয়ারবাতান গ্রামের শামসুর গাজীর পুত্র ইসমাইলকে ব্যাপক মারপিট করে। এছাড়া নেহালপুর গ্রামের তারক মিস্ত্রীর পুত্র নিরঞ্জন মিস্ত্রীর মৎস্য ঘের দল-বল নিয়ে দখল করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের উপর ব্যাপক হামলা ও নির্যাতন চালায়। অপরদিকে ধুলিহর সানাপাড়া গ্রামের মোছার জামাই অসহায় ভ্যান চালক আব্দুর রশিদকে তুচ্ছ ঘটনায় ব্যাপক মারপিট করে পা ভেঙ্গে দেয়। আব্দুল হামিদ এলাকার ত্রাস। তার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। হিং¯্র প্রকৃতির হওয়ায় এলাকার মানুষ সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত্র থাকে। সরকার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সব ধরনের অপকর্ম চালায় হামিদ। যুগিপোতা সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় হামিদ সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। সদর উপজেলা আ’লীগের একজন মাধ্যম সারির নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামিদের কারণে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা আমাদের ভোট ব্যাংক। অথচ এই হামিদ দলীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে হামিদের গ্রেফতারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ও নিরীহ মানুষদের আনন্দ প্রকাশ এবং তার অত্যাচারে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মিষ্টি বিতরণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অপরদিকে হামিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ লোকজন ও ধুলিহরের আ’লীগের দলীয় কর্মী-সমর্থকরা অবিলম্বে হামিদকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট