ডেস্ক রিপোর্ট: পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না! অথচ আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে! স্বাভাবিক কার্জকর্ম করছেন! প্রতিদিন নিজ কর্মস্থলে হাজিরা খাতায় সই করছেন! জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জনাচ্ছেন। আবার আদালত থেকে জামিন নেওয়ারও কোন প্রয়োজন পড়ছে না। ! এমনটাই হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর থানায়! এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে নাগরিক সমাজে।
শনিবার এমনই একজন নাশকতা মামলার আসামিকে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরা সদরের ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৬৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫শত টাকা শনিবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। এসময় অন্যান্য অতিথির সাথে সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাশকতা মামলার পলাতক আসামি ও বিএনপি নেতা ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুল।
গত ২৭ ডিসেম্বর’ ১৭ তারিখে সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই সোহরাব হোসেন বাদি হয়ে ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুলসহ ১২জনের নাম উল্লেখ করে একটি নাশকতার মামলা দায়ের করেন। সদর থানায় মামলা নং ৪৫। এই মামলার আরেক পলাতক আসামি মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতিও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অফিস করছেন! অথচ পুলিশের বিশেষ অভিযানে তাদের দেখা মিলছে না!
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর’১৭ তারিখ রাতে পুরাতন সাতক্ষীরা পল্লীমঙ্গল হাইস্কুল মাঠে পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার মৃত. তাজুউদ্দিন সরদারের ছেলে মাও. শামসুর রহমান, বাগডাঙ্গা এলাকার তাজুউদ্দিন সরদারের ছেলে আতিয়ার রহমান, মাটিয়াডাঙ্গা এলাকার মো. জোহর আলীর ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক, তথ্য প্রযুক্তি আইনে আটক হওয়া আসামি উত্তর কাটিয়া এলাকার মৃত. আব্দুর রউফের ছেলে মোদাচ্ছেরুল হক হুদা, বাগডাঙ্গা এলাকার মৃত শামসুর রহমানের ছেলে আব্দুল খালেক, মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রহ্মরাজপুর এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে মমিনুর রহমান মুকুল, ভালুকাচাঁদপুর এলাকার মৃত আব্দুর রউফের ছেলে ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মোফাচ্ছের হক ওরফে মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি, কালিগঞ্জ উপজেলার গোলখালী গ্রামের আত্তাব উদ্দীনের ছেলে আবুল কালাম আজাদ, সদর উপজেলা কাথন্ডা এলাকার নুর উদ্দিন মোল্যার ছেলে আনিছুর রহমান, একই এলাকার যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি জেলা জামাতের আমির খালেক মন্ডলের ছেলে শামীম হোসেন ও কলারোয়া উপজেলার লাঙলঝাড়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামসহ ৬০/৭০ জন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরায় নাশকতার গোপন বৈঠক শুরু করেছে এমন সংবাদ পান সদর থানা এসআই সোহরাব হোসেন। এঘটনা জানতে পেরে তিনি বিষয়টি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে পল্লীমঙ্গল হাইস্কুল মাঠে অভিযান পরিচালনা করলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যান্য ব্যক্তিরা পালিয়ে গেলেও মাও. শামসুর রহমান, আতিয়ার রহমান ও আবু বক্কার সিদ্দিককে আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ী সদর থানার এসআই সোহরাব হোসেন বাদি হয়ে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নামে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
১৩ শনিবার সকালে জানুয়ারি বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ভিত্তি প্রস্তরের দিন মামলার ৭নং আসামি ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুল এমপির সাথে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৩ জানাুয়ারি নাশকতা মামলার পলাতক আসামি হওয়া সত্ত্বেও মুকুল যুগ্ম-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। যার সংবাদ একাধিক স্থানীয় দৈনিকে ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।