ফরাসি কোম্পানি ল্যাকটালিস-এর প্রস্তুতকৃত শিশু গুঁড়ো দুধে ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া যায় গত বছরের ডিসেম্বরে। তখন থেকে রবিবার পর্যন্ত বিশ্বের ৮৩টি দেশ থেকে নিজেদের তৈরি ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি গুঁড়ো দুধের বাক্স প্রত্যাহার করার কথা জানিয়েছে ল্যাকটালিস। তবে চলমান প্রত্যাহার কর্মসূচির মধ্যেই দুটি ভোক্তা দেশের ৩৬ জন গ্রহীতার মধ্যে ক্ষতিকর ওই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব শনাক্ত করা হয়েছে। ওই দুধ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকির কথা স্বীকার করেছেন ল্যাকটালিস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমানুয়েল বেসনিয়ের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুধ প্রত্যাহারের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল গত ডিসেম্বরে। বাচ্চারা ল্যাকটালিসের দুধ পান করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে অভিভাবকরা শত শত মামলা দায়েরের পর ওই কোম্পানির কারখানায় তদন্ত শুরু হয়। সেসময় ল্যাকটালিসের একটি কারখানায় স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব আবিষ্কার হয়। এর প্রেক্ষিতে ডিসেম্বরে বাজার থেকে গুঁড়োদুধ প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করে কোম্পানিটি। প্রত্যাহারকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে পিকট, মিলুমেল এবং তারানিস ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধ।
রবিবার (১৪ জানুয়ারি) ল্যাকটালিস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমানুয়েল বেসনিয়ের জানান, ‘১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি গুঁড়ো দুধের বাক্স সংক্রমিত হয়েছে।’ তবে তার দাবি, সব দুধ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ায় পণ্য বিতরণকারীদেরকে কোনটি ভালো আর কোনটি সংক্রমিত তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে হবে না। বেসনিয়ের বলেন, ‘তারা জানে তাক সব কিছু সরিয়ে নিতে হবে।’
স্যালমোনেলার কারণে প্রচণ্ডরকমের ডায়রিয়া হয়, পেটে ব্যথা হয়, বমি হয় এবং পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এটি জীবনঘাতী পর্যন্ত হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য। এই পর্যন্ত শুধু ফ্রান্সের স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ জন, আর স্পেনে আক্রান্ত হয়েছে ১ জন। শুক্রবার ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রিসে আরেকজন সম্ভাব্য আক্রান্তকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
ল্যাক্টালিস কোম্পানির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ইউরোপ, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার যেসব দেশে এর প্রভাব পড়েছে সেগুলোকে এরইমধ্যে এই ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় এর প্রভাব পড়েনি।
কারখানায় ব্যাকটেরিয়ায় প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার খবর ল্যাকটালিস কর্তৃপক্ষ আড়াল করতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ফরাসি সংবাদপত্র জার্নাল দু দিমানচেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ল্যাকটালিসের প্রধান নির্বাহী তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে এবং আমরা তা তদন্ত করব। এক্ষেত্রে আমরা পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা দেব।’
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহযোগিতা প্রদানেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ল্যাকটালিস গ্রুপ হলো বিশ্বের বৃহত্তর একটি দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ৪৭টি দেশে এর ২৪৬টি উৎপাদনস্থল রয়েছে। কেবল ফ্রান্সেই প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫ হাজার মানুষ কাজ করছে।