দক্ষিণ ভারতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এই ভেষজটি বাংলাদেশেও কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এতে আছে নানাবিধ উপকারি উপাদান। যা পেটের রোগ সারানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে, মানসিক অবসাদকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং নানাবিধ ত্বকের রোগের চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এখানেই শেষ নয়। নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করলে আরো অনেক উপকার মিলতে শুরু করে। যেমন ধরুন…
১. দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
পুদিনা পাতার অন্দরে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ মুখ গহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মেরে তো ফেলেই। সেই সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
২. স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায়
আজকাল কী ছোট ছোট জিনিস মনে রাখতে বেশ সমস্যা হচ্ছে? তাহলে সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই পুদিনা পাতার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি খাওয়া শুরু করলে ব্রেন পাওয়ার এতটা বেড়ে যায় যে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি এবং মনোযোগও বাড়তে শুরু করে। এই কারণেই তো ছোট বাচ্চাদের প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে পুদিনা পাতা খাওয়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৩. স্ট্রেস এবং ক্লান্তি দূর করে
বর্তমান সময়ে নানা ক্ষেত্রে কম্পিটিশন এতটা বেড়ে গেছে যে স্ট্রেস এবং ক্লান্তি যেন প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুদিনা পাতাই পারে আপনাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন উপহার দিতে। কেন এমন কথা বলছি, তাই ভাবছেন তো? আসলে বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে মানসিক চাপ যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন যদি অল্প কিছুটা সময় কাজ থেকে ছুটি নিয়ে পুদিনা পাতার গন্ধ নেওয়া যায়, তাহলে দারুন ফল মেলে। এমনটা করলে ক্লান্তিও দূর হয়। আর যদি সরাসরি পুদিনার পাতার অ্যারোমা নিতে ইচ্ছা না করে, তাহলে গরম জলে মুঠো খানেক পুদিনা পাতা ফেলে ভাপ নিলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
৪. মাথা যন্ত্রণা কমায়
বিষয়টা শুনতে আজব লাগলেও বাস্তবিকই কিন্তু মাথা যন্ত্রণা কমাতে পুদিনা পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো পুদিনা পাতা নিয়ে তার গন্ধ শুকলেই দারুন আরাম পাওয়া যায়। আর যদি এমনটা করতে মন না চায়, তাহলে পুদিনা পাতার তেল অল্প করে মাথায় লাগালেও সমান উপকার মেলে। আসলে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান, প্রদাহ কমিয়ে মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যা কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।
৫. ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে
পুদিনা পাতায় উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি এনজাইম শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে দেহের অন্দরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার কোনো সুযোগই পায় না। ফলে এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৬. ওজন কমায়
পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাঁচক রসের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। ফলে হজম ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কমতে শুরু করে। তাই যারা নতুন বছরে ওজন কমানোর প্ল্যান করছেন, তারা প্রতিদিনের ডায়েটে পুদিনা পাতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!
৭. ত্বকের যত্নে কাজে আসে
পুদিনা পাতার রসে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিসেপটিক প্রপার্টিজ, যা ত্বকের অন্দরে লুকিয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ফলে ত্বকের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ব্রন এবং পিম্পল জাতীয় স্কিন ডিজিজের প্রকোপও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা পোকা-মাকড় কামড়ানোর পর জ্বালা যন্ত্রণা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমায়
নিয়মিত রান্নায় দিয়ে অথবা কাঁচা অবস্থায় পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাঁচক রসের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা কমে, সেই সঙ্গে বদ-হজমের মতো রোগও ধারে ঘেঁষতে পারে না। তাই যদি অনিয়ম-বেনিয়মের কারণে প্রায়শই বুক জ্বালা, চোরা ঢেকুর ওঠার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে পুদিনা পাতার সঙ্গ নিতে ভুলবেন না যেন!
৯. ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
পুদিনা পাতার অ্যারোমা এতটাই কড়া হয় যে তা ইনহেল করলে বুকে জমে থাকা কফ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ফুসফুসের ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং নানাবিধ রেসপিরেটারি প্রবলমেও ধীরে ধীরে কমে যায়। প্রসঙ্গত, অ্যাজমা এবং জ্বর এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে এমন ধরনের কোনো সমস্যা হলে একবার পুদিনা পাতাকে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। এমনটা করলে উপকার যে মিলবে, তা হলফ করে বলতে পারি।