আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে বিএনপিকে মাঠে নামার সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। রায় উপলক্ষে সম্ভাব্য করণীয় ঠিক করতে আজ সোমবার বিকালে ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা ডাকা হয়েছে। একই স্থানে আজ বৈঠক ডাকা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ বর্ধিত সভা ও সমাবেশ করে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। নেতারা বলছেন, নৈরাজ্য-সন্ত্রাস হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তারা প্রতিরোধ গড়বেন। আর বিএনপি সহিংসতায় না গেলে কোনো ধরনের উসকানি দেবেন না তারা। সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বকশীবাজার, ঢাকা মেডিকেল, হাই কোর্ট, প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, কাকরাইল, গুলিস্তান, নয়াপল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভোর থেকেই অবস্থান নেবেন। গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ আয়োজিত এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘৮ তারিখের রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্নভাবে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে। আমরা কারও সঙ্গে পাল্টাপাল্টিতে যাব না। তবে রায়কে কেন্দ্র করে কেউ পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করলে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক পাহারায় থাকব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা উসকানি দেব না, তবে কেউ যদি উসকানি দেয় প্রয়োজন হলে যেমন কুকুর তেমন মুগুর। কুকুরের ঘেউঘেউ যেমন হবে মুগুর তেমনই নেমে আসবে।’ সূত্রমতে, রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ এবং প্রেস ক্লাব, কাকরাইল, গুলিস্তান, নয়াপল্টন এলাকায় যুবলীগকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থান নেবে। রায়কে কেন্দ্র করে নাশকতা-সন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর করলে জবাব দেবে আওয়ামী লীগ। এ জন্য ১৪ দলকেও পাশে চায় দলটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ৮ তারিখকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে আক্রমণ করবেন তা সহ্য করা হবে না। আমরা যেমন ঢাকা দক্ষিণের প্রত্যেকটি আওয়ামী লীগ নেতার বাসা চিনি, তেমনি কোন বাসায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী থাকেন তা-ও জানি। আক্রমণ করলে তা সহ্য করা হবে না। সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার রায় উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতীতে যারা জ্বালাও-পোড়াওয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের। গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা সরকার মেনে নেবে না। আইন সবার জন্য সমান। রায়ের পর কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্রমতে, এরই মধ্যে রাজধানীর ৪৯টি থানার ওসি ও সংশ্লিষ্ট ডিসিদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নাশকতা মামলায় কোনো আসামি জামিনে থাকলে তিনি এখন কোথায় আছেন তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ বলেন, আইন সবার জন্য সমান। দুর্নীতি করলে তার বিচার হবে। কিন্তু এই বিচারকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গাড়ি পোড়াও, পুলিশের ওপর আক্রমণ, দেশের ধ্বংস করতে দেওয়া হবে না। আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেব। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, দুর্নীতির রায়কে ঘিরে কাউকে রাজপথে সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না। ভোর থেকেই মহানগরের নেতা-কর্মীরা রাজপথ দখলে রাখবে। যেখানেই সন্ত্রাস-নাশকতা সেখানেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করব।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
পূর্ববর্তী পোস্ট