স্বকৃত নোমান
কুয়ার বাইরে
মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবী এবার পাকা নিয়ত করলেন ইন্দোনেশিয়া যাবেনই। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশটি দেখার ইচ্ছা তার বহুদিনের। দেশটির রাজধানী জাকার্তায় প্রায় পনের বছর ধরে তার বড়বেটা আবুল হাশেমের বসবাস। বিয়েও করেছে সেখানেই, এক মেরিন ইঞ্জিনিয়ারকে। চাঁদের মতো দুটি ছেলেমেয়ে। ছেলেটার বয়স আট, মেয়েটার পাঁচ। নাতি-নাতনিকে কখনো চোখের দেখা দেখেননি কাশেম। ছবির দেখাকে কি আর দেখা বলে?
প্রকৌশলবিদ্যায় তিন বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রামের স্কলারশিপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গিয়েছিল আবুল হাশেম। মার্স্টাস শেষ করে ভেবেছিল দেশে ফিরে আসবে, কিন্তু একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে থেকে গেল। বাংলাদেশের তখন যা হাল! সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল, হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী, বেকারত্বের অভিশাপে যুবসমাজ জর্জরিত। কখন কী ঘটে যায় বলা যায় না। দেশে ফিরে করবেটা কী? বেতন কম হলেও থেকে যাওয়াটাই ভালো মনে করল। পরিশ্রম করলে বেতন বাড়তে কদিন।
হাশেমের ইচ্ছে ছিল ইউরোপের কোনো দেশে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার। কাগজপত্রও রেডি করেছিল, কিন্তু অনুমতি দিলেন না তার বাবা। কাফের-মুশরিকের দেশে লেখাপড়া করতে গিয়ে ছেলেটাও যদি তাই হয়ে যায়! হচ্ছে না? তার এক বন্ধুর ছেলে বহু দৌড়ঝাঁপ করে বহু টাকা খরচ করে নরওয়ে গেল। তার বাবা কত বড় আলেম, পুরো জেলায় নামডাক, ছেলে কখনো এক ওয়াক্ত নামাজ ক্বাজা করেনি, অথচ সাত বছর পর দেশে ফিরল কিনা আস্ত একটা নাস্তিক হয়ে!
বাবাকে ইন্দোনেশিয়ায় আনতে পারবে কোনোদিন ভাবেনি হাশেম। বিয়ে করেছে দশ বছর হয়ে গেল, অথচ বাবা-মাকে এখনো বউয়ের মুখটা দেখাতে পারেনি। বিয়ের এক বছর বাদেই ছেলেটা জন্মালো। দুধ ছাড়তে না ছাড়তেই নিনিমারইয়ানির পেটে মেয়েটা নড়াচড়া শুরু করে দিল। দুই সন্তানের পেছনেই চলে গেল টানা ছয় বছর। মেয়েটা দুধছাড়ার পর চাকরিতে যোগ দিল নিনিমারইয়ানি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই চাকরি, সরাক্ষণ ব্যস্ত, বাংলাদেশে আসার মতো সময় কই? তবু বউ-বাচ্চা নিয়ে একবার দেশটা ঘুরে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল হাশেম। নিনিমারইয়ানি রাজি হলো না। পেট্টোলবোমায় সারা দেশে তখন যে হারে মানুষ মরছে, ছেলেমেয়ে নিয়ে কেন মরতে আসবে নিনিমারইয়ানি?
পেট্টোলবোমা বন্ধ হওয়ার পর, সরকার যখন মোটামুটি স্থিতিশিল, একদিন হাশেম বলল, ‘চলো এবার যাই।’ চোখ দুটো কমলালেবুর মতো করে নিনিমারইয়ানি বলল, ‘মাথা খারাপ! তোমার দেশে মানবাধিকার বলতে কিছু আছে? লেখক-ব্লগারদের যেভাবে গলা কেটে মারা হচ্ছে, সরকার একটা টুঁ শব্দ করছে? তুমিও তো মাঝেমধ্যে ব্লগে লেখ। তোমার গলাটা না আবার কেটে দেয়! ঐ খুন-খারাপির দেশে বাবা আমি যাব না। যেতে চাইলে তুমি একা যাও।’
মেয়েটার জন্মের পর বাবাকে ইন্দোনেশিয়া বেড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল হাশেম। মাওলানা আবুল কাশেম রাজি হয়ে গেলেন। এক মাসের মধ্যে পাসপোর্টও হয়ে গেল। কিন্তু ভিসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার সময় কই তার? কত ব্যস্ত মানুষ তিনি। একটা মাদ্রাসার মুহতামিম। আল জামেয়াতুল আরাবিয়া জগন্নাথপুর। নিজের হাতেগড়া মাদ্রাসা। হাসতম ক্লাস পর্যন্ত। এতিমখানাও আছে একটা। আবাসিক-অনাবাসিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন শ তালেবুল এলেম লেখাপড়া করছে। তার উপর তিনি সোহবতে ইসলামের জেলা কমিটির নায়েবে আমির। নাস্তিকদের ফাঁসির দাবিতে ঢাকার শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে নিজের মাদ্রাসা থেকে দেড়’শ তালেবুল এলেম ঢাকায় নিয়েছিলেন তিনি। এত ছাত্র জেলার আর কোনো মাদ্রাসার কোনো মুহতামিম নিতে পারেননি। জেলা আমির খুশি হয়ে নায়েবে আমির পদে ভূষিত করলেন তাকে।
তারপর থেকেই ব্যস্ততার সীমা নেই তার। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মিটিং-মিছিল-সমাবেশ। থাকবে না? দ্বীন-ইসলামের বিরুদ্ধে যা শুরু করেছে সরকার। ভারতের কাছে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে না করতেই আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে দিল, নাস্তিকদের আস্কারা দিতে দিতে মাথায় তুলে ফেলল। কয়েক বছর যেতে না যেতেই সম্পূর্ণ ইসলাম-বিরোধী নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষণা করল। দেশের ঈমানদার ওলামা-মাশায়েখরা কি আর চুপ করে বসে থাকতে পারে? আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবে তারা? বহু ভাগে বিভক্ত আলেম-ওলামারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠন করলেন সোহবতে ইসলাম সংগঠন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে নাস্তিকরা যখন ইসলামের অপমান শুরু করল, আলেম-ওলামাদের ফাঁসির দাবিতে যখন শাহবাগে অবস্থান নিল, আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করতে হলো সোহবতে ইসলামকে। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক নিয়মে শাপলা চত্বরে জমায়েত হলো সংগঠনের হাজার হাজার মর্দে মুজাহিদ। তাঁবেদার পুলিশ-বাহিনিকে ব্যবহার করে সাউ- গ্রেনেড ফাটিয়ে কী নির্যাতনটাই না করল সরকার! শত শত আলেম-ওলামাকে কান ধরে উঠবস করিয়ে কী অপমান-অপদস্তই না করল!
তবু থামল না জালিম সরকার, একের পর এক ইসলাম-বিরোধী কর্মকা- চালিয়ে যেতেই লাগল। ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করল একজন বিধর্মীকে প্রধান বিচারপতির আসনে বসিয়ে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে, যে দেশে হজ্বের পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় জমায়েতটি হয় তুরাগ নদের তীরে, যে দেশের রাজধানীকে বলা হয় মসজিদের নগরী, সে দেশের প্রধান বিচারপতি তো হবেন একজন পাক্কা মুসলমান। অথচ সরকার করলটা কী! এ নিয়ে কর্মসূচি দিতে হলো সোহবতে ইসলামকে। ভারতের তাঁবেদার সরকার দেশের ওলামা-মাশায়েখের দাবিকে পাত্তাই দিল না।
কদিন পর ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারের এক দালাল হাইকোর্টে রিট করল। আবারও কর্মসূচি দিতে হলো সোহবতে ইসলামকে। তৌহিদি জনতার চাপে পড়ে রিট খারিজ করতে বাধ্য হলো হাইকোর্ট।
আন্দোলনের পর আন্দোলন। একটা গেলে আরেকটা আসে। মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবীর বিশ্রাম নেই। আজ এই মিটিং তো কাল ঐ মিছিল। দ্বীন-ইসলাম হেফাজতের নানা আন্দোলন-সংগ্রামে তার মাস ফুরায়।
দুই
কাগজপত্র সব ঠিকঠাক ছিল। ইন্দোনেশিয়ার ভিসা পেতে মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবীকে বিশেষ কোনো জটিলতা পোহাতে হলো না। নায়েবে মুহতামিমের উপর মাদ্রাসা পরিচালনার ভার দিয়ে, গারুড়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন তিনি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ছেড়ে বিমানটি যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে আটাশ হাজার ফুট উপরে উঠল, গেদা শিশুর মতো হাউমাউ করে তিনি কান্না শুরু করলেন। পাশের যাত্রীটি জিজ্ঞেস করল, ‘এনি প্রবলেম?’ তিনি কাঁদতেই লাগলেন। যাত্রীটি আবার জিজ্ঞেস করল, ‘এনি প্রবলেম মি. মাওলানা?’ তিনি অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বললেন, ‘তেরি বাত মেরে চমজ মে নেহি আতা ভাইসাহাব। বাংলা সে বলো, ওয়ারনাহ উর্দু।’ লোকটি কিছু না বুঝে মাওলানার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ভাবল, দেশ ছেড়ে বিদেশ যাচ্ছেন মি. মাওলানা, দেশের জন্য খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক।
মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবীর কান্নার কারণ আসলে অন্য। বিমানটা যখন এয়ারপোর্ট থেকে উড়াল দিল, জানালার ফাঁকে তাকিয়ে তিনি তখন ঢাকা শহরটাকে দেখছিলেন। বড় বড় দালান-কোঠা গাছপালা রাস্তা-ঘাট ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষুদ্র থেক ক্ষুদ্র হতে হতে একটা সময় অদৃশ্য হয়ে গেল। চারদিকে শূন্যতা আর শূন্যতা। কেমন ভয় ভয় করতে লাগল তার। দোয়া-কালাম পড়ে বুকে ফুঁ দিলেন। তাতেও কাজ হলো না। মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগল।
হঠাৎ চোখে পড়ল পেজাতুলো মেঘ। মেঘের স্তুপ কোথাও পাহাড়ে মতো, কোথাও মসজিদের মিনারের মতো, কোথাও গম্বুজের মতো, কোথায় মখমলের গালিচার মতো। সারাজীবন মেঘ দেখেছেন নিচ থেকে, এখন দেখছেন উপর থেকে। সুবহানাল্লাহ! রাব্বুল ইজ্জতের কী মহিমা! মেঘ দেখতে দেখতে আধা ঘণ্টা পার করে দিলেন। এয়ারকুলারের ঠাণ্ডায় ঝিমুনি এসে গেল তার। বিমানটা হঠাৎ কেঁপে উঠলে ঝিমুনিটা কেটে গেল। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আকাশটাকে ধু-ধু মরুভূমির মতো মনে হলো। তখন মনে পড়ে গেল জাজিরাতুল আরবের কথা। আরবের মরুভূমি বুঝি দেখতে এমন? এমন মরুভূমি তিনি কত দেখেছেন খোয়াবে! শেষরাতে খোয়াবের মধ্যে হেঁটে হেঁটে কতবার তিনি মক্কা থেকে মদিনায় গেছেন, কত ঘুরেছেন বদর-উহুদ-তায়েফেরে মরুপ্রান্তরে। হাজিরা এমন মরুভূমি পাড়ি দিয়েই বুঝি মক্কা থেকে মদিনায় যায়? আহা পবিত্র রওজার দেশ! মৃত্যুর আগে নিশ্চয়ই তিনি হজ করতে যাবেন। রওজা মোবারক না দেখে তার যেন মৃত্যু না হয়। ছেলের এখন টাকাপয়সা হয়েছে, বাবার ইচ্ছা সে অপূর্ণ রাখবে না।
না, এসবও তার কান্নার কারণ নয়। তিনি কাঁদছিলেন আসলে খোদার কুদরত দেখে। আশরাফুল মাখলুকাতের জেহেনে কী হেকমত দিলেন পাক মাওলা, টন টন লোহাকে আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে মানুষ। বাইরের দুনিয়ায় গরমে মানুষের ছাতি ফেটে যাচ্ছে, অথচ বিমানের ভেতরে কিনা শীতকাল! কী কুদরত খোদার। জীবনটা প্রায় শেষই হয়ে গেল, অথচ খোদার এমন কুদরত তিনি কখনো দেখলেন না।
‘আল্লাহু আকবার’ বলে দু-হাত তুলে তিনি মোনাজাত ধরলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন, ‘মাবুদ, তোমার দরবারে লাখো-কোটি শুকরিয়া, তোমার এই গুনাহগার বান্দাহকে তুমি তোমার কুদরত দেখাচ্ছ। পাক কালামে তুমি ঠিকই বলেছ, কুল সিরু ফিল আরদ…। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর। আমি ভ্রমণে বেরিয়েছি মাবুদ। আমার ভ্রমণ তুমি কবুল করো।’
উত্তেজনার সীমা নেই মাওলানা ফেনবীর। জাকার্তা এয়ারপোর্টে কখন পৌঁছবে বিমান! পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম দেশের মাটিতে কদম রেখে কখন নিজেকে ধন্য করবেন! কখন দেখবেন বড় বড় মিনার ও গম্বুজের বিশাল বিশাল সব মসজিদ! বিমানে ওঠার আগে ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। বিকেল ঠিক পাঁচটায় জাকার্তা এয়ারপোর্টে পৌঁছবে বিমান। হাশেম তার অপেক্ষায় থাকবে ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে বিমানটা আকাশে থেমে আছে, ঘড়িটাও থেমে আছে। কেমন অস্বস্তি লাগে তার। বসে থাকতে থাকতে হাতে-পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে যায়।
পাঁচটা বাজার সাত মিনিট আগে জাকার্তা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল বিমান। ইন্দোনেশিয়ার মাটিতে পা রেখে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে প্রভুর শোকরগুজার করলেন মাওলানা কাশেম। চোখ গেল এয়ারপোর্টের বিশাল ভবনটার দিকে। এত বড় ভবন জীবনে কোনোদিন দেখেননি। ভবনের গেটের উপর দেখলেন বিশাল একটা পাখির ছবি। বিমানের গায়েও ঠিক এমন একটি পাখির ছবি দেখেছেন। ঠিক হুদহুদ পাখির মতো। আল্লাহর কালামে কতবার আছে এই পাখির কথা। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে উঠল তার। পাঞ্জাবির হাতায় চোখ মুছে ভিআইপি লাউঞ্জের দিকে হাঁটা ধরলেন।
লাউঞ্জে ঢোকা মাত্রই বাজপড়া মুর্দার মতো থমকে দাঁড়ালেন তিনি। এ কী কা-! গোটা লাউঞ্জজুড়ে দেব-দেবীর ম্যুরাল! ঠিক জগন্নাথপুর দুর্গামন্দিরের মূর্তিগুলোর মতো। ছোটবেলায় যখন চুরি করে মন্দিরে যেতেন ঠিক এরকম দেব-দেবীর মূর্তি দেখতেন। বিচলিত মাওলানা লাগেজ হাতে দেখতে বাঙালির মতো এক লোককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাইসাহেব, ‘এটা কি জাকার্তা এয়ারপোর্ট?’ লোকটি বাঙালিই বটে। হেসে উঠে বলল, ‘ইয়েস আঙ্কেল।’
ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে লাউঞ্জের বাইরে এসে দেখলেন হাশেম তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। বাবাকে কদমবুচি করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল হাশেম। বহুদিন পর বেটাকে দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন কাশেম মাওলানা। হাশেমের ছেলে ও মেয়েটা গাড়িতে বসা। ফ্যাল ফ্যাল করে বুড়ো দাদার দিকে তাকিয়ে। হাশেম বলল, ‘তোমাদের দাদা, সালাম দাও।’ সালাম দিল তারা। সালামের উত্তর দিয়ে দুজনকে দুই বগলে চেপে ধরলেন কাশেম।
গাড়ি ছুটছে আশি কিলোমিটার বেগে। কাশেম মাওলানার পলক পড়ে না। কত বিরাট কত ঝকঝকে তকতকে শহর। ঢাকা শহরের মতো জ্যাম নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহর খাস রহমত। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহদের এমন সুন্দর সুন্দর নগরী উপহার হিসেবে দেন। জানালার ফাঁকে বড় বড় গম্বুজ ও মিনার বিশিষ্ট একটা মসজিদ দেখতে পেয়ে চেহারাটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। বিড়বিড় করে বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ। কত সুন্দর মসজিদ! মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ, অথচ দেশের কোথাও এমন একটি সুন্দর মসজিদ নেই। বড় আফসোস!’
ট্রাফিক সিগন্যালে থামল গাড়িটা। বাইরে তাকিয়ে রাস্তার মোড়ে খবসুরত দুটি জেনানাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলেন মাওলানা। পরমুহূর্তে ভুল ভাঙল। বাস্তবের মানুষ নয়, ইট-সিমেন্টে গড়া মূর্তি, অথচ দেখতে কিনা একেবারে জ্যান্ত জেনানার মতো! মাথায় সোনালি মুকুট, গলায় বিচিত্র কারুকার্যখচিত হার, সারা গায়ে নানা নকশা, বুক দুটো উদোম, স্তনগুলো বেলের মতো। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলেন না কাশেম। চোখে ফিরিয়ে মনে মনে তওবা পড়ে বেটাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এগুলো কিসের মূর্তি হাশেম?’
হামেশ বলল, ‘এগুলো মূর্তি নয় আব্বা, এগুলো ভাস্কর্য। ইন্দোনেশিয়ার রাস্তার মোড়ে মোড়ে এরকম অনেক ভাস্কর্য দেখতে পাবেন। সবচেয়ে বেশি ভাস্কর্য বালি দ্বীপে। আপনাকে নিয়ে যাব একদিন। পৃথিবীর সুন্দরতম একটি দ্বীপ। দুনিয়াটাকে আল্লাহ কত সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, বালি না গেলে বোঝা যায় যায় না।’
রাস্তা ফাঁকা পেয়ে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল ড্রাইভার। গাড়ি ছুটতে লাগল ঝড়ের বেগে। শাঁই শাঁই। পাঞ্জাবির পকেট থেকে তসবিহটা বের করে গোণা শুরু করলেন কাশেম। চোখেমুখে ফুটে উঠতে থাকে চিন্তার গভীর ছাপ।
তিন
বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত আটটা বেজে গেল। হাশেমের ফ্ল্যাটটি তিন তলায়। দরজা খুলল নিনিমারইয়ানি। একলাফে কপালে উঠে গেল মাওলানা কাশেমের দুই চোখ। তার পুত্রবধুর গায়ে কিনা জিন্সের প্যান্ট আর ফুলহাতা গেঞ্জি! দ্রুত চোখ নামালেন তিনি। শ্বশুরকে সালাম দিল নিনিমারইয়ানি। সালামের জবাব দিয়ে নাতি-নাতনির হাত ধরে ভেতরে ঢুকলেন কাশেম।
টেবিলে খাবার প্রস্তুত করে শ্বশুরকে খেতে ডাকল নিনিমারইয়ানি। খেতে বসে প্লেটের ভাতগুলো নাড়াতে নাড়াতে মাওলানা কাশেম বললেন, ‘বাবা হাশেম!’
জি আব্বা।
বউমার নামটা যেন কী?
নিনিমারইয়ানি। ওর নাম নিনিমারইয়ানি, আব্বা।
এই নামের অর্থ কী বাবা?
আমি ঠিক জানি না। আপনার বৌমাকে জিজ্ঞেস করুন না। ডাকব তাকে?
না না, থাক। বৌমা কাজ করছে এখন, পরে কথা বলা যাবে।
খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, আচ্ছা, বউমা কি মুসলমান?
ভাতের লোকমাটা মুখে তুলতে গিয়ে নামিয়ে রেখে হাশেম বলল, এটা কেমন কথা আব্বা! আপনার ছেলে বিধর্মী মেয়েকে বিয়ে করবে? নিনিমারইয়ানি পাক্কা মুসলিম। শরিয়ত মোতাবেক আমাদের বিয়ে হয়েছে।
কিন্তু নামটা যে মুসলমানের বলে মনে হচ্ছে না।
হা হা হা। বুঝতে পেরেছি। এটা তো বাংলাদেশ নয় আব্বা। এটা ইন্দোনেশিয়া। এদেশের মেয়েদের নাম এমনই হয়। মেঘবতী সুকর্ণপুত্রীর নাম শোনেননি? ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট।
তিনিও কি মুসলমান?
কী যে বলেন আব্বা! বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নারী প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।
কিন্তু নামটা তো বাংলা মনে হচ্ছে।
মেঘবতী তো বাংলাই। সুকর্ণ হচ্ছে তার বাবার নাম। সুকর্ণের পুত্রী। হিন্দুপুরাণের একটি চরিত্রের নাম সুকর্ণ। সেই সুকর্ণের নামে তার বাবার নাম।
ঘোলাচোখে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কাশেম। তারপর এক গ্লাস পানি খেয়ে ভাতের লোকমা মুখে দিলেন। কয়েক লোকমা খেয়ে বললেন, আচ্ছা, এয়ারপোর্টের গেটে একটা পাখি আঁকা দেখলাম। বিমানের গায়েও দেখেছি। ওটা কি হুদহুদ পাখি?
হাশেম হাসতে হাসতে বলল, না আব্বা, ওটার নাম গরুড়। গরুড় পাখি। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রতীক গরুড়। জাতীয় বিমান সংস্থার নামও এই পাখির নামে।
ও। আচ্ছা, পাখিটা কি আমাদের দেশেও আছে?
না আব্বা, এই পাখি এখন পৃথিবীর কোথাও নেই। গরুড় হলো হিন্দুপুরাণে উল্লিখিত একটি বৃহদাকার পৌরাণিক পাখি। এই পাখি হিন্দুদেবতা বিষ্ণুর বাহন।
নাউযুবিল্লাহ।
জি আব্বা?
বলছিলাম যে বউমা নাতি-নানতিরা খাবে না?
ওরা পরে খাবে। আর দুটো ভাত দেই আব্বা?
কাশেম মাথা নাড়লেন, না না। এগুলোই তো খেতে পারছি না!
খাওয়ার পর পায়খানার বেগ পেল কাশেমের। ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে দিয়ে হাইকমোডে কীভাবে কী করতে হয় বুঝিয়ে দিল হাশেম। ভেতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে কাশেম যেই না কমোডটায় বসলেন অমনি বেগটা উবে গেল। চেষ্টা করেও পেটটা খালি করা গেল না। শেষে শুধু অজু করে বেরিয়ে এলেন। ড্রইং রুমের এক কোণায় জায়নামাজ বিছিয়ে দিল নিনিমারইয়ানি। নিয়ত বেঁধে সুরা পড়তে পড়তে কাশেমের চোখ গেল জানালার বাইরে বিশাল একটা ব্যানারের উপর। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি। নিশ্চয় মরদুদ শয়তানের ধোকা। আসতাগফিরুল্লাহ!
নামাজ শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। ব্যানারটায় ভালো করে চোখ বুলাতে লাগলেন। হাই ভোল্টেজের লাইটের আলোয় ঝকঝক করছে ব্যানারটা। বিচিত্র সাজে সজ্জিত তিনটা পুরুষমূর্তি আঁকা। তিনটার মাথাতেই পালকের মুকুট, একটার হাতে ধনুক, একটার চেহারা হনুমানের মতো। মাওলানা কাশেম ভেবে পান না এসব ছবিঅলা ব্যানার এই দেশে কেন? এসব ব্যানার তো বাংলাদেশে দুর্গাপূজার সময় চোখে পড়ে। হিসাব মিলাতে পারেন না তিনি। সত্যি তিনি ভুল করে অন্য কোনো দেশে এসে পড়লেন না তো! তার বেটা কি সত্যি সত্যি ইন্দোনেশিয়ায় থাকে, নাকি ইউরোপের কোনো অমুসলিম দেশে?
বাবাকে বারান্দায় দেখে পেছনে এসে দাঁড়াল হাশেম ও তার স্ত্রী। আঙুল উঁচিয়ে ব্যানারটা দেখিয়ে কাশেম জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, ব্যানারটা কিসের?’ হাশেম বলল, ‘এটা একটা নাটকের বিজ্ঞাপন আব্বা। এদেশের জাতীয় গ্রন্থের নাম রামায়ণ।’
হিন্দুদের রামায়ণ?
জি আব্বা।
কদিন আগে রামায়ণের নৃত্যনাট্য হয়েছিল শহরের নাট্যশালায়। এটা সেই নৃত্যনাট্যের বিজ্ঞাপন।
ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন কাশেম। অপলক। মেয়েটা কেঁদে উঠায় নিনিমারইয়ানি ভেতরে চলে গেল। হাশেম বলল, ‘রাত হয়েছে আব্বা। শুয়ে পড়–ন। কাল সকালে দেখবেন।’
শুয়ে পড়লেন আবুল কাশেম। চোখ বোজা মাত্রই ভেসে উঠল বিমান থেকে দেখা মেঘপুঞ্জ, ধুধু মরুভূমির মতো সেই দৃশ্য। আবারো মনে পড়ে গেল জাজিরাতুল আরবের কথা। আর কটা দিন যাক, তারপর হাশেমকে হজে যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলা যাবে।
চার
দুদিন পর টানা চার দিনের ছুটি পেল হাশেম। নিনিমারইয়ানিরও ছুটি। ছুটিটা বালি দ্বীপে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিল তারা। যেদিন তারা বালির উদ্দেশে রওনা দিল সেদিনই প্রথম ইন্দোনেশিয়ার রুপিহা, মানে টাকা, দেখতে পেলেন মাওলানা আবুল কাশেম। বাবার হাতে এক শ টাকার পাঁচটি নোট দিয়ে হাশেম বলল, ‘এগুলো পকেটে রাখেন আব্বা।’ নোটগুলো হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন কাশেম। আচমকা ভুরু কুঁচকে গেল তার। নোটের গায়ে কিনা মস্ত নাকওয়ালা একটা মূর্তি আঁকা! মূর্তিটা ছোটবেলায় কোথাও যেন দেখেছেন। ঠিক মনে করতে পারেন না। হয়ত জগন্নাথপুর দুর্গামন্দিরে। ছেলের কাছে জানতে চাইলেন, ‘টাকার গায়ে এটা আবার কিসের মূর্তি?’ হাশেম হাসতে হাসতে বলল, ‘এটা গণেশের মূর্তি আব্বা। হিন্দুদেবতা গণেশ।’
নোটগুলো পকেটে না রেখে ছেলের দিকে বাড়িয়ে ধরে কাশেম বললেন, ‘তোর কাছে রাখ বাবা। দরকার হলে আমি চেয়ে নেব।’ নোটগুলো নিয়ে নিনিমারইয়ানির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসে হাশেম। নিনিমারইয়ানিও হাতের পিঠে মুখ চেপে হাসে। কাশেমের চোখ এড়ায় না তাদের হাসি।
পর্যটন দ্বীপ বালিতে পৌঁছে মাওলানার চোখ আর কপাল থেকে নামে না। দ্বীপজুড়ে নানা দেব-দেবীর মূর্তি। কোনোটা পুরুষের, কোনোটা নারীর। কেউ নৃত্যরত, কেউ যুদ্ধরত। কোনোটার হাতে তীর-ধনুক, কোনোটার হাতে বংশী। ধাবমান ঘোড়ার একটা রথ থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলেন না তিনি। একটা পুরুষমূর্তির হাতে ঘোড়ার লাগাম, পেছনে একটা নারী মূর্তি।
বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে হাশেম বলল, ‘বালিকে বলা হয় হাজার মন্দিরের দ্বীপ। এখানে মন্দিরের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার। সুন্দর সুন্দর সব মূর্তি ও ভাস্কর্যের সমাহার এই দ্বীপে। কদিন আগে সৌদির বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ ইন্দোনেশিয়া সফরে এসেছিলেন। তার সম্মানে ভাস্কর্যগুলো ঢেকে দিতে চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু বালির স্থানীয় সরকার রাজি হলো না। তারা বলল, ভাস্কর্য ও মূর্তিগুলো যেমন আছে তেমনই থাকবে। কেননা এগুলো তাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির পরিচয় বহন করে।’
সৌদি বাদশার নাম শুনে মরুভূমির দৃশ্যটা আবারও ভেসে উঠেছিল কাশেমের চোখে। কিন্তু সৌদি বাদশার এই দ্বীপে আসার কথা শুনে দৃশ্যটা হাওয়া হয়ে গেল। চেহরায় যুগপৎ বিস্ময় ও মুগ্ধতা নিয়ে ভাস্কর্যটার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
একটা থ্রি স্টার হোটেলে রাত যাপন করল সবাই। পরদিন সকালে গেল গুনুং আগুং পাহাড়ের কাছে। পাহাড়টির কাছেই ইন্দোনেশিয়ার হাজার বছরের ইতিহাসসমৃদ্ধ বেসাকিহ্ মন্দির। দুপুর পর্যন্ত ওখানে থেকে তারপর গেল তানাহ লট মন্দিরে। সমুদ্রের পাশে একটি বিশাল পাথরের ওপর মন্দিরটির অবস্থান। সমুদ্রে তখন জোয়ার। মন্দিরটির ভিত্তিমূল তলিয়ে গেছে পানির নিচে। যেন সমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরটি। চোখ ফেরাতে পারেন না মাওলানা। তার মনে হয় না তিনি চন্দ্র-সূর্যের এই পৃথিবীতে আছেন। যেন শাস্ত্রপ্রোক্ত সেই বেহেশতের সামনে দাঁড়িয়ে, যেখানে পার্থিব দুঃখ-ক্লেশ নেই, আছে অনাবিল প্রশান্তি। পাক মাওলার অপার লীলা দেখে তিনি বিহ্বল।
সূর্য তখন অস্তাচলে। হাশেমের ছেলে ও মেয়েটা খেলছে। স্মার্টফোনের ক্যামেরায় মন্দিরের কয়েকটা ছবি তুলল নিনিমারইয়ানি। লাল সূর্যটার দিকে তাকিয়ে আছেন মাওলানা কাশেম। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
পাঁচ
মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবী এক মাসের সফরে ইন্দোনেশিয়া গেলেও থাকলেন দেড় মাস। আরো একটি মাস থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু মাদ্রাসা ও বাড়ির কথা চিন্তা করে ফিরে এলেন। যেদিন ফিরলেন তার পরদিন সকালে সোহবতে ইসলামের জেলা আমিরের ফোন। কালই জেলাশহরে যেতে হবে। ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সোহবতে ইসলামের আমির। সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের সামনে গ্রিক দেবী থেমিসের একটা মূর্তি বসিয়েছে জালিম সরকার। ইসলাম রক্ষার্থে ঘেরাও কর্মসূচিতে ওলামা-মাশায়েখদের দলে দলে যোগ দিতে হবে। ঐ মূর্তি না সরানো পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে তৌহিদি জনতা ভেঙে ফেলবে ঐ মূর্তি।
মাওলানা আবুল কাশেম হ্যাঁ-না কিছু বললেন না। আমীরকে একটা সালাম দিয়ে ফোনটা রেখে দিলেন।
সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাওর জন্য যেদিন ঢাকা রওনা হওয়ার কথা তার তিন দিন আগে সোহবতে ইসলামের জেলা আমীর বরবারে একটা চিঠি লিখলেন মাওলানা আবুল কাশেম ফেনবী। চিঠির উল্লেখযোগ্য কিছু কথা এমন : ‘আমার বয়স হয়েছে। আল্লা-বিল্লাহ করে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব ঠিক করেছি। সাংগঠনিক কাজে সময় দেওয়া আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়। আমি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে সোহবতে ইসলাম থেকে পদত্যাগ করলাম। আমাকে সংগঠনের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিতে হুজুরের একান্ত মর্জি কামনা করছি।’
সেদিনই মাদ্রাসার এক তালেবুল এলেমকে দিয়ে পোস্ট অফিসে পাঠিয়ে দিলেন চিঠিখানা।
৩০.০৪.২০১৭