আবুল কালাম আজাদ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তিনি উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লড়ে পরাজিত হন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এলাকার জনগণ জানতে পারে এই ইউপির উপনির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। ওই দিনই তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
শুধু তাই নয়, ফরিদপুর সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নেও নৌকার বিরুদ্ধে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনজকে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। এ নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা দলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বার বার হুঙ্কার দিলেও তা কেবল কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না অনুপ্রবেশকারীদের।
২৯ মার্চ ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ইউপি ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
তেঁতুলিয়া থেকে দুই বছর আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ভোট করে বিজয়ী হন রফিকুল ইসলাম মুরাদ চৌধুরী। তার মৃত্যুতে উপনির্বাচনে ২৯ মার্চ ভোট গ্রহণ করা হবে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ধানের শীষ নিয়ে গতবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। নেত্রকোনার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ‘আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগ করেন এমন তথ্য ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম শুনলাম। তাকে বিএনপি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি হিসেবে জানতাম। ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোট করার মতো অনেক যোগ্য লোক ছিলেন। যিনি গত নির্বাচনেও বিএনপি থেকে নির্বাচন করলেন তাকে মনোনয়ন দিতে হবে! আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে এতই দেউলিয়া হয়ে পড়েছে?’
মোহনগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আ ক ম শফিকুল হক বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তা ২৭ ফেব্রুয়ারি জানার পর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য পরদিন তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ’ মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ইকবাল বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ অনেক আগেই আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং দলের প্রাথমিক সদস্যপদও নিয়েছেন। সে কারণেই তাকে তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়। ’ তেঁতুলিয়া ইউপির সদ্যপ্রয়াত চেয়ারম্যান মুরাদ চৌধুরীর ছোট ভাই পাপ্পু চৌধুরী বলেন, ‘আবুল কালাম আজাদ দুই বছর আগেও আমার ভাই নৌকার মনোনয়ন নিয়ে ভোট করে বিজয়ী মুরাদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করলেন। তিনি কখন আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন, জানি না। ’ ক্ষোভ প্রকাশ করে পাপ্পু চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একটি সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগ, আরেকটি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। ’ ২০১১ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়নে সাদেকুজ্জামান, আলিয়াবাদ ইউনিয়নে ওমর ফারুক চৌধুরী ওরফে ডব্লিউ, অম্বিকাপুর ইউনিয়নে আবু সাঈদ চৌধুরী বারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে অবশ্য তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘দলীয় মনোনয়নের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ। তারপর মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তারা বিএনপির লোক হলে এবং দলের যোগদান প্রক্রিয়া যদি যথাযথ না হয় এমন অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে। ’
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ‘আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিজয় ত্বরান্বিত করতেই তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ’