বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শিক্ষক, বিজ্ঞানী,গবেষক এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ ও গবেষনা অনুদান প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানদের অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত রাখতে এবং এ বিষয়ে তাদের সচেতন করে গড়ে তুলতে অভিভাবক-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
বিশিষ্ট লেখক ও অধাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতকালকে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারী কারা এটা হামলার ধরণ থেকেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায় তারাতো ধর্মান্ধ। অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটা অনুষ্ঠানে বসে ছিলেন, সেখানে তাকে ছুরি মারা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) এবং গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সাথে সাথে এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাকে (অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল) ঢাকা সিএমএইচ এ নিয়ে আসেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। জাফর ইকবালের অবস্থা এখন অনেকটাই স্টেবল, ভালো।
সরকার প্রধান বলেন, যারা এই ঘটনাগুলি ঘটায় তারা মনে করে একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেশতে চলে যাবে। তারা কোনদিন বেহেশতে যাবে না, তারা দোজখের আগুনে পুড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করলে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে তারা এই অন্ধোত্বে ভুগছে কেন? যদিও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বাংলাদেশে কোনরকম সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আমরা চলতে দেব না। মাদকের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
আমাদের শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে অন্যান্য ধর্মের প্রত্যেককে যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই সকলের প্রতি আমি জঙ্গিবাদ বিরোধী আহবান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এমনকি তিনি যেসব পাবলিক মিটিং করেন সেখানেও তিনি আহবান জানান, মাদক,সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থেকে সকলে মিলে ছেলে-মেয়েকে মুক্ত রাখতে হবে এবং এজন্য যা যা করণীয় সবাইকে তাই করতে হবে।এই সভার মাধ্যমেও এজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সিলেটের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল এক যুবকের অতর্কিত হামলায় ছুরিকাহত হন বরেণ্য লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেখান থেকে পরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ স্থানান্তর করা হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা.আফম রুহুল হক এমপি।
অধ্যাপক রুহুল হক বলেন,বিজ্ঞান মনস্ক জাতি গঠনে স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু সুদূর প্রসারি কর্মসূচি আরম্ভ করেছিলেন।কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতের পর অন্যান্য ক্ষেত্রের মত বিজ্ঞানচর্চাও পিছিয়ে যায়।১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে জাতির পিতার চিন্তা,চেতনা প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন।বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ফলে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রূপপুরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাযার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ আজ এগিয়ে চলছে।
তিনি আরও বলেন,দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অবস্থিত ইনমাস ও নিনমাসের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায় পরমাণু শক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের জন্য বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।কক্সবাজারে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভারে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি গড়ে তোলা হয়েছে।রাজশাহীতে নতুন একটি নভো থিয়েটার গড়ে তোলা হচ্ছে,জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘরের উন্নয়ন চলছে।
এছাড়াও তিনি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।কেননা শুধুমাত্র ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একজন শিক্ষার্থীর প্রায় ৯০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।এছাড়াও দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটাছুটির ভোগান্তিতো আছে।বিশেষ করে মেয়েদের জন্য বর্ণনাতীত।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে ১১৬ জনকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ, ২৩৫৮ জনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ (এনএসটি) এবং ১৪১টি প্রকল্পকে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী টোকেন হিসেবে ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে ফেলোশিপ ও অনুদানের চেক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি এবং ফেলোশিপ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সরকার দেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কি করছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখারও আহবান জানান।
ছেলে-মেয়েদের যেন বাবা-মায়ের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক হয়, বাবা-মাকে সন্তানরা মনের কথা খুলে বলতে পারে পরষ্পরের মধ্যে সে ধরনের একটা মানসিক যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ছেলে-মেয়েরা বড় হবার সময় একেক বয়সে তাদের একেক রকম মানসিক বৃদ্ধি ঘটে।
সেই বিষয়টির প্রতিও বাবা-মাকে নজর দেয়ার, বাবা-মা’কে আরো সহনশীল হবার এবং ছেলে-মেয়েরা যেন বিপথে না যায় তার প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বাবা-মা, অভিভাবক,শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এত মেধাবী ছেলে-মেয়ে তারা যেন কেউ বিপথে না যায় সেটাই আমরা চাই। কারণ দেশকে আমাদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা আর পিছিয়ে যাব না। সামনের দিকে এগোবো এবং বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবো।