বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন নিয়ে ব্যাপক নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়েছে। ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় সম্মেলন সম্পর্কে ভিন্ন বক্তব্য আসায় এ নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগ নেতাদের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি এ নির্দেশনা দিলেও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিকালে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা জানান, ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। সম্মেলন ঘিরে এ নাটকীয়তায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এমন অনিশ্চয়তার মাঝেও পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ থেমে নেই। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আসেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৩১ মার্চই সম্মেলন। প্রস্তুতি নাও। তবে এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মধুর ক্যান্টিনে উপস্থিত ছিলেন না। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী।
বেলা সোয়া ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। এরপর সেখান থেকে বের হয়ে তারা বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে উপস্থিত হন। এ সময় তাদের উচ্ছ্বসিত ও উৎফুল্ল দেখা যায়। সেখানে তারা জানান, ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। এ ঘোষণার পর ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা পরস্পরের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন। সোহাগ-জাকিরের অনুসারী অন্য নেতাকর্মীরাও একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। অবশ্য অনেকে ফেসবুকে এটিকে ‘সোহাগ-জাকিরের জয়’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে থাকার পর সোহাগ ও জাকির ধানমণ্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে তারা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টি অবহিত করেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ বলেন, ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন হচ্ছে না। সময়মতো সম্মেলন হবে। তবে সময়মতো কবে হবে সেই বিষয়ে তিনি পরিষ্কার কিছু বলেননি। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলন নিয়ে আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। পুরো বিষয়টি তাকে অবহিত করেছি। ‘সময়মতো সম্মেলন হবে’ এ বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ছাত্রলীগের সম্মেলন করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে সে অনুযায়ী সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে ছাত্রলীগকে দেখা যায়নি। ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিপূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের মার্চের মধ্যে ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে বলে জানান। তিনি বলেছিলেন এটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছা। ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণারও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। ৮ জানুয়ারি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সাক্ষাৎ শেষে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৩১ মার্চ ছাত্রলীগের সম্মেলন করতে বলেছেন। ১২ জানুয়ারি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা ডেকে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ২ মাস অতিবাহিত হলেও সম্মেলন আয়োজনে দৃশ্যমান প্রস্তুতি দেখাতে পারেনি ছাত্রলীগ। রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের আগে সংবাদ সম্মেলনের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে ২ মাস পেরিয়ে গেলে ৩১ মার্চ সম্মেলন হবে কিনা তা নিয়ে নেতাকর্র্মীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়।
এদিকে, সম্মেলন নিয়ে এমন নাটকীয়তার মধ্যেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগের রাজনীতি। পদ পেতে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং বয়স নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা।
এছাড়া নতুন নেতৃত্ব গঠনে কোনো এলাকা প্রাধান্য পাচ্ছে তাও রয়েছে আলোচনার শীর্ষে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের মাঠ গোছাতে শুরু করেছেন। জুনিয়র পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে নতুন করে জমে উঠেছে রাজনীতি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মধুর ক্যান্টিনে দেখা যাচ্ছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের।
অন্যদিকে, সম্মেলনের ঘোষণাকে ঘিরে প্রায় এক যুগে ধরে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ‘সিন্ডিকেট’ এবং বিরোধী অংশের বিভক্তি এখন অনেকটা প্রকাশ্যে এসেছে। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট ভাঙতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ। সিন্ডিকেট বিরোধী এ অংশের নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে রয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের একটি অংশ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা।