গত ৫ এপ্রিল বসুন্ধরা শপিং মলের সিনেপ্লেক্সে গিয়াস উদ্দীন সেলিম পরিচালিত “স্বপ্নজাল” ছবিটির প্রিমিয়ার শো দেখতে গিয়েছিলাম। দেখতে গিয়েছিলাম সেলিমের ছবি বলে নয়, ওটা পরীমনি অভিনীত ছবি বলে। পরীমনি কেন? সুন্দরী বলে? ভালো অভিনেত্রী বলে? না, পরীমনি আমার স্বপ্নজাল “কবিতাকুঞ্জ”-এর আজীবন সদস্য বলে। কবিতাকুঞ্জ নির্মাণের সূচনাপর্বে আমি যখন অর্থসংকটে পড়ে ফেসবুকে সাহায্য চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, তখন নায়িকা পরীমনি সাংবাদিক আকবরের মাধ্যমে কবিতাকুঞ্জের জন্য আমার ব্যাংক একাউন্টে এক লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে খুবই বিস্মিত করেছিলো। সেই থেকে পরীমনি আমার স্বপ্নজালের মৌমাছি।
দুই বছর আগে সিনেমা হলে বসে দেখেছিলাম আমারি কবিতা অবলম্বনে মাসুদ পথিক নির্মিত– “নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ”। আমি ঐ ছবিতে কিঞ্চিত অভিনয়ও করেছিলাম। গত ৫ এপ্রিল সিনেমা হলে বসে আবারও বড়-পর্দায় দেখলাম পরীমনির ছবি স্বপ্নজাল। সেলিম, কিছু মনে করবেন না, আমি আপনার ছবিটিকে পরীমনির ছবি বলছি বলে।
ছবি শেষ হলে বাবুর সঙ্গে দেখা হলো। বাবু মানে আমাদের দেশের ‘ওয়ান পিস’ অভিনেতা ও গায়ক ফজলুর ররহমান বাবু। ছোট ভাইয়ের মতোই মনে করি ওকে। সঙ্গে ওর স্ত্রী ও দুই কন্যা। বাবু যে স্বপ্নজালে অভিনয় করছে, জানতামই না। স্বপ্নজালের খল-চরিত্রের বাবুর অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ। উৎপল দত্তের সমমানের অভিনেতা বাবু। বাবু আমার গ্রামে কাশবনে গেছে, ওর নাট্যগুরু আমার প্রিয় বন্ধু নাট্যকার ও অভিনেতা মামমুনুর রশীদের সঙ্গে।
বাবুকে নিয়ে ভক্তপরিবৃতা পরীমনির দিকে আমি এগিয়ে গেলাম। পরীর দৃষ্টি ও শ্রবণাকর্ষণ করে– একটু উচ্চস্বরেই বললাম, “এই যে পরী, একটু বিলম্বে হলেও আমি এসেছি। তোমার ছবি দেখলাম। তোমার অভিনয় খুব সুন্দর হয়েছে।”
আমাকে আমার ডাকনাম ধরে এমন উচ্চকন্ঠে কে ডাকে? আমি উপরের দিকে পরীকে ঘিরে থাকা ভক্ত ও চিত্রসাংবাদিকদের জটলাটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।নীচের দিকে তাকাতেই আমাদের চার চোখের মিলন হলো।
আমি প্রথমবারের মতো পরীমনিকে দেখলাম। ধবধবে শাদা মিহি-সুতোর শাড়ি এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত আবৃত শাদা কাপড়ের ব্লাউজ পরিহিতা পরীকে উপরের সিঁড়ি থেকে নীচের সিঁড়িতে নেমে আসতে দেখে মনে হলো কাশবনের পুকুর পাড়ে এমন গন্ধরাজ ফুলই তো আমি ফুটতে দেখেছি। আমাকে দেখতে পেয়ে ভক্তদের ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পরীমনি আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
আমি মনে করেছিলাম, এবার পরীমনি নিশ্চয়ই জানতে চাইবে স্বপ্নজালে ওর অভিনয় আমার ভালো লেগেছে কি না। আমার কোনো পরামর্শ আছে কি না ওর অভিনয় নিয়ে। কিন্তু না। আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে পরীমনি বললো, “আমি কিন্তু আপনার কবিতাকুঞ্জ দেখতে যাবো।”
আরে এই মেয়ে বলে কী? কোথায় স্নপ্নজাল আর কোথায় কবিতাকুঞ্জ? পরী কি ওর ছবি স্বপ্নজাল দেখার বদলা নিতে চাইছে আমার কবিতাকুঞ্জ দেখে? আমি একটু বিব্রত বোধ করলাম। ভাবলাম, পরীমনি কবিতাকুঞ্জ দেখতে গেলে হাজার মানুষ ভিড় করবে কবিতাকুঞ্জে। এদের সামলাবো কী করে?
ওকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বললাম, তুমি কি কবিতাকুঞ্জের ডোনার বোর্ডটি ফেইসবুকে দেখোনি? ওখানে তোমার নাম রয়েছে সর্বশীর্ষে। সবার উপরে তুমি। তুমি হলে কবিতাকুঞ্জের এক নম্বর সদস্য। কবিতাকুঞ্জ তো আমার নয়, তোমার। স্বপ্নজালও তোমার, কবিতাকুঞ্জও তোমার।
আমার রচনাবলির ২য় খণ্ডটি সঙ্গে নিয়েছিলাম। স্বপ্নজালে সুন্দর অভিনয় করার জন্য আশীর্বাদ জানিয়ে আমার নাম স্বাক্ষর করে বইটি উপহার দিলাম পরীকে। পরী খুশি হলো আমার বই উপহার পেয়ে। আমি খুশি হলাম পরীকে আমার বই উপহার দিতে পেরে। গল্পটা এখানেই শেষ। এরপর কোনো ডেভলাপমেন্ট হলে আপনাদের জানাবো।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)