অনলাইন ডেস্ক: দুর্নীতির মামলায় ভূমিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কুতুবউদ্দিন আহম্মেদকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, গুলশানে ১০ কাটা পরিমাণ জমি আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কুতুব উদ্দিন অসৎ-উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাফ কবলা দলিল নং-১২৮২৪ (তারিখ- ১১/০৮/২০০৪) রাজউকের হুকুম দখলকৃত/অধিগ্রহণকৃত ১০ কাঠা জমি শ্বশুর ও অন্যদের নামে ক্রয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন।
অনুসন্ধানের সময় প্রাপ্ততথ্য ও রেকর্ড থেকে জানা যায়, গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসের ১২৮২৪ নম্বর সাফ কবলা দলিলে মাধ্যমে গুলশান থানার ভোলা মৌজার সিএস ৯৮ নং খতিয়ানের সিএস এবং এসএ ৪৫৭ নং দাগের ৫৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি থেকে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ (৫ কাঠা) জমি মো. আব্দুল জলিল মৃধা এবং ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ (৫ কাঠা) জমি যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক (ডা.) এ কে এম আনোয়ার উল্লাহ ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামসুন নাহারের নামে ক্রয় দেখানো হয়। একই দলিলমূলে মোট ০৩ জন ক্রেতার নামে মোট ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় দেখানো হয়। এই সাফ কবলা দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, দলিলে ১ নং ক্রমিকের ক্রেতা হচ্ছেন মো. আব্দুল জলিল মৃধা; যিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন আহম্মেদের শ্বশুর। এখানে দলিলে ক্রেতা হিসেবে জনাব আব্দুল জলিল মৃধার নাম উল্লেখ থাকলেও এই জমির প্রকৃত ভোগ-দখলকারী বা সুবিধাভোগী হচ্ছেন মো. কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ। তিনিই মূলত এ সব কর্মকাণ্ডের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন। নেপথ্যে থেকে তিনি প্রভাব বিস্তার করে কৌশলে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রাজউকের হুকুম দখলকৃত সম্পত্তি অবমুক্ত করেছেন। পাশাপাশি নাজমুল ইসলাম সাইদকে জমির ভুয়া আমমোক্তার সাজিয়ে ও শ্বশুর আব্দুল জলিল মৃধাসহ আরও দু’জনকে ক্রেতা সাজিয়ে নিজেই এই জমি আত্মসাৎ করেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আব্দুল জলিল মৃধার নামে এই জমি কেনা হলেও তিনি কখনোই এই জমি ভোগদখল করেননি। মূলত শুরু থেকেই কুতুবউদ্দিন আহম্মেদ এই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। বর্তমানে এখানে সপরিবারে বসবাস করছেন। এই ভূমি আত্মসাৎ প্রক্রিয়ার সঙ্গে কুতুব উদ্দিন আহমেদের শ্বশুর সহযোগী হিসেবে জড়িত থাকলেও বা তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও তিনি ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করায় তাকে অভিযুক্ত আসামি হিসেবে গণ্য করা হয়নি। এছাড়া, এই জমির অন্য ক্রেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক (ডা.) এ কে এম আনোয়ার উল্লাহ ও তার স্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) সামসুন নাহারের ক্রেতা হিসেবে দলিলে নাম থাকলেও প্রকৃত অর্থে তারা কখনও এই জমি ভোগদখল করেননি। বর্তমানেও এই জমি তাদের দখলে নেই। কুতুব উদ্দিন আহমেদ তাদের প্রভাবিত করে কম মূল্যে গুলশানের জমি কিনে দেবেন বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দলিলে ক্রেতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই জমির প্রকৃত ভোগ দখলকারী বা সুবিধাভোগী হচ্ছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ। এসব অভিযোগে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মো. কুতুব উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।